ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনেস্কোতে মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বসংস্কৃতির মিলনমেলা

সাইফুল ইসলাম (রনি),ফ্রান্স
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী উদযাপন পরিণত হয়েছে এক বিশ্বসংস্কৃতির মিলনমেলায়। বাংলাদেশ দূতাবাস প্যারিস-ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য উদযাপন করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছেন এই ঐতিহাসিক আয়োজনে। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোচনাসভা, বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা তাদের মাতৃভাষার গান ও গল্প পরিবেশন করেছেন, এবং বৈশ্বিক সংলাপের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষার ইতিহাস এক রক্তাক্ত বেদনার ইতিহাস।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু এখনও তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।

 

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে তার বক্তব্যে বলেন, “ভাষা কেবল ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচিত্র। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো মানেই বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।”

বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের ভাষার প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।” তিনি আরও বলেন, ভাষা রক্ষার দায়িত্ব কেবল একটি দেশের নয়, বরং এটি পুরো বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হতে হবে।

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ভাষাবিদ, ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং অতিরিক্ত সচিব নাফিজা সাইমা।

 

এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “শিক্ষার রূপান্তরের মাধ্যমে বহুভাষাবাদ প্রচারের জন্য আদিবাসী ভাষা রক্ষা করা”। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, নেদারল্যান্ডস, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সার্বিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া ও মরক্ক, ক্যামেরুন শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন। এছাড়া, “বহুভাষাবাদ” ও “ভাষার প্রতি ভালোবাসা” বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ৩৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করেন।

 

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির ২৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে, যা মাতৃভাষার গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের এই বিশেষ পরিবেশনা ভাষার বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইউনেস্কোতে মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বসংস্কৃতির মিলনমেলা

আপডেট সময় : ১১:৩১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী উদযাপন পরিণত হয়েছে এক বিশ্বসংস্কৃতির মিলনমেলায়। বাংলাদেশ দূতাবাস প্যারিস-ফ্রান্সের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য উদযাপন করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছেন এই ঐতিহাসিক আয়োজনে। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোচনাসভা, বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা তাদের মাতৃভাষার গান ও গল্প পরিবেশন করেছেন, এবং বৈশ্বিক সংলাপের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষার ইতিহাস এক রক্তাক্ত বেদনার ইতিহাস।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু এখনও তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।

 

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে তার বক্তব্যে বলেন, “ভাষা কেবল ভাব প্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচিত্র। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো মানেই বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা।”

বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, সমগ্র বিশ্বের ভাষার প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।” তিনি আরও বলেন, ভাষা রক্ষার দায়িত্ব কেবল একটি দেশের নয়, বরং এটি পুরো বিশ্বের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হতে হবে।

 

বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ভাষাবিদ, ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী এবং অতিরিক্ত সচিব নাফিজা সাইমা।

 

এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “শিক্ষার রূপান্তরের মাধ্যমে বহুভাষাবাদ প্রচারের জন্য আদিবাসী ভাষা রক্ষা করা”। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, নেদারল্যান্ডস, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সার্বিয়া, আজারবাইজান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া ও মরক্ক, ক্যামেরুন শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিদের মুগ্ধ করেন। এছাড়া, “বহুভাষাবাদ” ও “ভাষার প্রতি ভালোবাসা” বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে ইউনেস্কোতে নিযুক্ত ৩৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করেন।

 

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির ২৫তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে, যা মাতৃভাষার গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের এই বিশেষ পরিবেশনা ভাষার বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।