ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদত্যাগপত্রে জোর করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিলেন স্থানীয়রা

কামরুল ইসলাম বাবু ,রাজশাহী প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:৫৫:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে

ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার থেকে স্বাক্ষর নেওয়া পদত্যাগপত্র

দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) একটি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তুলে গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে উপজেলার বাসুদেবপুর ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ইউনিয়নের স্লুইসগেট থেকে বাসুদেবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য একটি রাস্তায় সিমেন্টের ঢালাই করছে এলজিইডি। ৫০ লাখ টাকার কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে করছেন হেনা, সেলিম ও সিজান নামের তিন ব্যক্তি। এই কাজে সিমেন্টের অনুপাত কম দেওয়া এবং শিডিউল অনুযায়ী পুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুলাল, তুহিন, মাফি, নাজমুলসহ ৫০ থেকে ৬০ জন স্থানীয় ব্যক্তি এসব অভিযোগ তুলে প্রতিকারের জন্য ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে যান।

তখন চেয়ারম্যান জানান, রাস্তাটির কাজ তো করছে এলজিইডির। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু করার নেই।

 

এ সময় কেউ কেউ বলে ওঠেন, চেয়ারম্যান এই কাজ থেকে টাকা খেয়েছেন। এ সময় স্থানীয়রা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল যায়। তবে পুলিশ স্থানীয়দের সরাতে পারেনি।

পরে অনিয়ম-দুর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হয় চেয়ারম্যানকে। এ সময় লিখে আনা একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে।

 

পদত্যাগপত্রে লেখা হয়েছে, আমি আমার দুর্নীতির কারণে এবং দুর্নীতি জনগণের কাছে প্রমাণিত হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।

 

এই পদত্যাগপত্র নিয়ে স্থানীয়রা ইউপি কার্যালয়ে তালা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দিতে যান। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইউপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

 

তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, এভাবে তো জোর করে পদত্যাগ হয় না। আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছি। পদত্যাগ করিনি। এখানে রাস্তা-টাস্তা কিছু না। এলাকার একটা পক্ষ আমাকে সরাতে চাইছে। তা না হলে কাজ এলজিইডির, আর আমাকে চাপ দেওয়া হয়?

 

কাজে অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমান বলেন, কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন বিষয়টা বুঝেছে। তারা ইউএনও অফিসে এসেছিল। তারা লিখিত দিতে চেয়েছে যে, কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না এটা তারা বুঝেছে। তাদের সমস্যা চেয়ারম্যানের সঙ্গে। এ জন্যই তাকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি ফরমালি এই পদত্যাগপত্র পাইনি। যতক্ষণ না পাচ্ছি, ততক্ষণ তিনিই চেয়ারম্যান। তবে স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিতে চেয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পদ-পদবি না থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগের আমলে এলাকার সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ ছিল তার। ‘কথা না শোনার কারণে’ সুযোগ পেলেই ফারুক চৌধুরী তাকে অপমান করতেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পদত্যাগপত্রে জোর করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিলেন স্থানীয়রা

আপডেট সময় : ০২:৫৫:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) একটি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তুলে গোদাগাড়ীর বাসুদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।

 

বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে উপজেলার বাসুদেবপুর ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ইউনিয়নের স্লুইসগেট থেকে বাসুদেবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য একটি রাস্তায় সিমেন্টের ঢালাই করছে এলজিইডি। ৫০ লাখ টাকার কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে করছেন হেনা, সেলিম ও সিজান নামের তিন ব্যক্তি। এই কাজে সিমেন্টের অনুপাত কম দেওয়া এবং শিডিউল অনুযায়ী পুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুলাল, তুহিন, মাফি, নাজমুলসহ ৫০ থেকে ৬০ জন স্থানীয় ব্যক্তি এসব অভিযোগ তুলে প্রতিকারের জন্য ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে যান।

তখন চেয়ারম্যান জানান, রাস্তাটির কাজ তো করছে এলজিইডির। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু করার নেই।

 

এ সময় কেউ কেউ বলে ওঠেন, চেয়ারম্যান এই কাজ থেকে টাকা খেয়েছেন। এ সময় স্থানীয়রা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল যায়। তবে পুলিশ স্থানীয়দের সরাতে পারেনি।

পরে অনিয়ম-দুর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হয় চেয়ারম্যানকে। এ সময় লিখে আনা একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে।

 

পদত্যাগপত্রে লেখা হয়েছে, আমি আমার দুর্নীতির কারণে এবং দুর্নীতি জনগণের কাছে প্রমাণিত হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।

 

এই পদত্যাগপত্র নিয়ে স্থানীয়রা ইউপি কার্যালয়ে তালা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দিতে যান। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইউপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

 

তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, এভাবে তো জোর করে পদত্যাগ হয় না। আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছি। পদত্যাগ করিনি। এখানে রাস্তা-টাস্তা কিছু না। এলাকার একটা পক্ষ আমাকে সরাতে চাইছে। তা না হলে কাজ এলজিইডির, আর আমাকে চাপ দেওয়া হয়?

 

কাজে অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমান বলেন, কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন বিষয়টা বুঝেছে। তারা ইউএনও অফিসে এসেছিল। তারা লিখিত দিতে চেয়েছে যে, কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না এটা তারা বুঝেছে। তাদের সমস্যা চেয়ারম্যানের সঙ্গে। এ জন্যই তাকে পদত্যাগে চাপ দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি ফরমালি এই পদত্যাগপত্র পাইনি। যতক্ষণ না পাচ্ছি, ততক্ষণ তিনিই চেয়ারম্যান। তবে স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিতে চেয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পদ-পদবি না থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগের আমলে এলাকার সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ ছিল তার। ‘কথা না শোনার কারণে’ সুযোগ পেলেই ফারুক চৌধুরী তাকে অপমান করতেন।