ঢাকা ০৬:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় ৯ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন মুহাম্মাদ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৩:০২:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ ৮১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এলাকার মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদের ছেলে। সে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আব্দুল্লাহর মা, নানা ও নানি কুরআনের হাফেজ।
এছাড়াও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন কুরআনের হাফেজ। মুহাম্মদ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেফজ শুরু করে। ২০২৫ সালের মে মাসে হেফজ সম্পন্ন হয়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় মুহাম্মাদ।
মুহাম্মাদের মা হাফেজা-আলেমা মাসুমা জান্নাত ও নানি হাফেজা-আলেমা রাবেয়া বসরী সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে অবস্থিত মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা পরিচালনা করেন। তার নানা হাফেজ মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া।
৭ বছর বয়সী কুরআনের হাফেজ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বলে, আমি কুরআনের ৫ লাইন করে মুখস্থ করতাম। যখন এক পৃষ্ঠা মুখস্থ হতো, তখন একবার রিভাইজ দিতাম। তারপর পরের পৃষ্ঠা মুখস্থ করতাম। ১০ থেকে ১১ মিনিটে এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করে ফেলতাম। এভাবে প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুখস্থ করেছি।
এভাবে ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেছি। আমি আমার নানুমনির কাছে থেকে হাফেজ হয়েছি। আমার হাফেজ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নানুর। এছাড়াও আমার আম্মুর অনেক অবদান রয়েছে। আমার নানুমনি কুরআন মুখস্থ করিয়ে দিতেন ও পড়া আদায় করে নিতেন। শুক্রবার আমার আম্মু পড়া নিতেন। আমার নানুমনির অবদান সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও পরিবারের সকল সদস্যদের অবদান রয়েছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি একজন হাফেজ মাওলানা মুফতি হতে চাই।
মুহাম্মাদের বাবা মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদ বলেন, এতো অল্প বয়সে ৯ মাসে কুরআন হেফজ করার বিষয়টি অনেকটা অলৌকিক ব্যাপার। মুহাম্মাদের মা ও নানি দুজনেই হাফেজা। মুহাম্মাদের মা ৭ বছর বয়সে তার মায়ের কাছে ১১ মাসে হেফজ করেছে। মায়ের তুলনায় মুহাম্মাদ দুই মাস আগেই হেফজ সম্পন্ন করেছে। তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদের নানির কঠোর অধ্যবসায়, চেষ্টা, পরিশ্রম ও দেখভালের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে মুহাম্মাদ হেফজ সম্পন্ন করেছে। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
মুহাম্মদ ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সাড়ে ৫ বছর বয়সে একটি নুরানি মাদরাসায় প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক বছরের মধ্যে প্লে ও নার্সারি সম্পন্ন করে। এরপর কোরআন হেফজ করার জন্য নুরানি পড়াশোনা বন্ধ রাখা হয়। তার নানির কাছে হেফজ শুরু করে।
মুহাম্মাদের মা হাফেজা আলেমা মাসুমা জান্নাত বলেন, আমার ছেলে মুহাম্মাদের বয়স যখন আড়াই মাস, তখন সে আল্লাহ আল্লাহ বলা শিখে। ওর সর্বপ্রথম মুখের কথা ছিল আল্লাহ। তখন থেকে আমাদের আগ্রহ হয় যে, হেফজ পড়াবো, কোরআনের হাফেজ বানাবো। ওর বয়স যখন সাড়ে ৫ বছর, তখন ওকে আরবি কায়দা দেয়া হয়।
৬ মাসের মধ্যে নাজেরা সম্পন্ন করানো হয়। এটা সম্পূর্ণ ওর নানির কাছে পড়ে। চার পারা করে পড়ে সম্পূর্ণ করার কারণে আল্লাহর রহমতে মাত্র ৯ মাসে হাফেজ হয়ে যায়।
মুহাম্মাদের নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরী বলেন, ছোট্ট শিশু মুহাম্মাদের মেধা অসাধারণ। মনোযোগ সহকারে পড়লে যে কোনো জিনিস খুব দ্রুত মুখস্থ করে দিতে পারে। মাত্র ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করে হাফেজের গৌরব অর্জন করেছে। তাকে বিশ্বজয়ী হাফেজ হিসেবে দেখতে চাই। কুরআনের ধারক বাহক হিসেবে দেখতে চাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কুষ্টিয়ায় ৯ মাসে কুরআনের হাফেজ হলেন মুহাম্মাদ

আপডেট সময় : ০৩:০২:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস মোড়ে এলাকার মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদের ছেলে। সে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আব্দুল্লাহর মা, নানা ও নানি কুরআনের হাফেজ।
এছাড়াও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন কুরআনের হাফেজ। মুহাম্মদ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেফজ শুরু করে। ২০২৫ সালের মে মাসে হেফজ সম্পন্ন হয়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় মুহাম্মাদ।
মুহাম্মাদের মা হাফেজা-আলেমা মাসুমা জান্নাত ও নানি হাফেজা-আলেমা রাবেয়া বসরী সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে অবস্থিত মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা পরিচালনা করেন। তার নানা হাফেজ মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া।
৭ বছর বয়সী কুরআনের হাফেজ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বলে, আমি কুরআনের ৫ লাইন করে মুখস্থ করতাম। যখন এক পৃষ্ঠা মুখস্থ হতো, তখন একবার রিভাইজ দিতাম। তারপর পরের পৃষ্ঠা মুখস্থ করতাম। ১০ থেকে ১১ মিনিটে এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করে ফেলতাম। এভাবে প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুখস্থ করেছি।
এভাবে ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ সম্পন্ন করেছি। আমি আমার নানুমনির কাছে থেকে হাফেজ হয়েছি। আমার হাফেজ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নানুর। এছাড়াও আমার আম্মুর অনেক অবদান রয়েছে। আমার নানুমনি কুরআন মুখস্থ করিয়ে দিতেন ও পড়া আদায় করে নিতেন। শুক্রবার আমার আম্মু পড়া নিতেন। আমার নানুমনির অবদান সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও পরিবারের সকল সদস্যদের অবদান রয়েছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি একজন হাফেজ মাওলানা মুফতি হতে চাই।
মুহাম্মাদের বাবা মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদ বলেন, এতো অল্প বয়সে ৯ মাসে কুরআন হেফজ করার বিষয়টি অনেকটা অলৌকিক ব্যাপার। মুহাম্মাদের মা ও নানি দুজনেই হাফেজা। মুহাম্মাদের মা ৭ বছর বয়সে তার মায়ের কাছে ১১ মাসে হেফজ করেছে। মায়ের তুলনায় মুহাম্মাদ দুই মাস আগেই হেফজ সম্পন্ন করেছে। তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদের নানির কঠোর অধ্যবসায়, চেষ্টা, পরিশ্রম ও দেখভালের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে মুহাম্মাদ হেফজ সম্পন্ন করেছে। সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
মুহাম্মদ ২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সাড়ে ৫ বছর বয়সে একটি নুরানি মাদরাসায় প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক বছরের মধ্যে প্লে ও নার্সারি সম্পন্ন করে। এরপর কোরআন হেফজ করার জন্য নুরানি পড়াশোনা বন্ধ রাখা হয়। তার নানির কাছে হেফজ শুরু করে।
মুহাম্মাদের মা হাফেজা আলেমা মাসুমা জান্নাত বলেন, আমার ছেলে মুহাম্মাদের বয়স যখন আড়াই মাস, তখন সে আল্লাহ আল্লাহ বলা শিখে। ওর সর্বপ্রথম মুখের কথা ছিল আল্লাহ। তখন থেকে আমাদের আগ্রহ হয় যে, হেফজ পড়াবো, কোরআনের হাফেজ বানাবো। ওর বয়স যখন সাড়ে ৫ বছর, তখন ওকে আরবি কায়দা দেয়া হয়।
৬ মাসের মধ্যে নাজেরা সম্পন্ন করানো হয়। এটা সম্পূর্ণ ওর নানির কাছে পড়ে। চার পারা করে পড়ে সম্পূর্ণ করার কারণে আল্লাহর রহমতে মাত্র ৯ মাসে হাফেজ হয়ে যায়।
মুহাম্মাদের নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরী বলেন, ছোট্ট শিশু মুহাম্মাদের মেধা অসাধারণ। মনোযোগ সহকারে পড়লে যে কোনো জিনিস খুব দ্রুত মুখস্থ করে দিতে পারে। মাত্র ৯ মাসে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করে হাফেজের গৌরব অর্জন করেছে। তাকে বিশ্বজয়ী হাফেজ হিসেবে দেখতে চাই। কুরআনের ধারক বাহক হিসেবে দেখতে চাই।