চুরি বেড়েছে হাসপাতালে,চিকিৎসা নিতে এসে টাকা-স্বর্ণ খোয়াচ্ছেন রোগীরা

- আপডেট সময় : ০৪:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে

হাসপাতালে টাকা হারিয়ে আহাজারি করছেন ভুক্তভোগী নার্গিস আক্তার। পাশে তাঁর স্বামী খাইরুল। ছবি সোমবার দুপুরে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির শিকার হয়েছেন দুই জন রোগী ও স্বজনরা। সোমবার (১৬ জুন) বেলা পৌণে ১২ টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে ঘটে এ ঘটনা।
রোগী, স্বজন ও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, প্রায় দিনই হাসপাতালে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। চোর মহিলা এবং বোরকা পরিধান করায় সিসিটিভি ফ্রুটেজে তাকে সনাক্ত করা যাচ্ছেনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগের দাবি জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তি খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের ধুপড়াখোল এলাকার কৃষক খাইরুল ইসলাম কয়েকদিন ধরে তাঁর ডান পায়ে হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। সকাল ১১ টার দিকে চিকিৎসার জন্য কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে আসেন। তাঁর স্ত্রী নারগিস আক্তার টিকিট কাটার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়ান। তিনি বেলা পৌণে ১২ টার দিকে টিকিট কেটে টাকা বের করতে গিয়ে দেখেন তাঁর ব্যাগের চেইন খোলা। ব্যাগে রাখা প্রায় ৮ হাজার টাকা নেই। এসময় তিনি সেখানে চিৎকার চেঁচামেচি করে কেঁদে উঠলে উপস্থিত জনতা তাকে শান্তনা দেন।
আরো জানা গেছে, এ দিন একটি শিশুর গলা থেকে স্বর্ণের একটি ধান তাবিজ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই শিশু ও তার স্বজনদের পরিচয় জানা যায়নি।
দুপুর ১২ টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে আহাজারি করছেন ভুক্তভোগী নারী নারগিস আক্তার। তাকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর স্বামী।
এ সময় নারগিস আক্তার বলেন, স্বামীর পায়ে ব্যথা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম টিকিটের জন্য। শুরু থেকেই এক অপরিচিত মহিলা তাকে টিকিট কাটকে সহযোগীতা করছিলেন। ওই নারীর সহযোগীতায় তিনি দুইটা টিকিট কাটেন। তবে টাকা পরিশোধের সময় দেখি ব্যাগের চেইন খোলা। টাকা নেই।
তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার সব শ্যাষ। পরীক্ষা করার জন্য আট হাজার টাকা এনেছিলাম। সব চুরি হয়ে গেছে। আমি কি করবরে এখন। কিডা দিবিনি টাকা।
নারগিসের স্বামী খাইরুল ইসলাম বলেন, সকালে হাসপাতাল গিয়েই জানতে পারি এক শিশুর গলা থেকে স্বর্ণের তাবিজ চুরি হয়েছে। পরে টিকিট কাটার সময় আমাদের টাকাও চুরি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। থানায় যাব।
সরেজমিন বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল চিকিৎসকরা ( শ্যাকমো) সেবা দিচ্ছেন।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, এক মহিলার টাকা ও এক শিশুর স্বর্ণ চুরি হয়েছে। মহিলা খুব কাঁন্নাকাটি করছিল। সবাই তাকে শান্ত্বনা দিয়েছে সকলে। হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তাঁর।
হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের কর্মচারী ফারুক হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জন রোগীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে ৪০০ – ৪৫০ জন রোগী সেবা নেন। অতিরিক্ত ভিড়ে প্রায়রদিনই চুরির ঘটনা ঘটছে। আজও দুইটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার হাসপাতালে দুইটা চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক শামীমা আক্তার। তিনি বলেন, প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। মহিলা চোর বোরকা পরিধান অবস্থায়। সেজন্য সিসিটিভিতে চোর সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাঁর ভাষ্য, প্রতিদিন অন্তত একজন আনসার সদস্য দাঁয়িত্বে থাকলে অপরাধ কমতো।
হাসপাতালে চুরির ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশের টহলসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা জোড়দার করা হবে।