ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ার রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টে অভিযান,২ লাখ টাকা জরিমানা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন ফাঁকা মাঠের ভেতর কয়েকটি টিনশেড রুম ও দুয়েকটি রাইড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট। যেখানে বিনোদনের নামে চলতো রঙ্গমহল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা হয় রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট। রিসোর্ট হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের আস্তানা।

 

গত কয়েকদিন ধরে এই রিসোর্টে অনৈতিক কাজের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়াও আরও বেশকিছু অভিযোগ ছিল এই পার্ক এন্ড রিসোর্টের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৬ জুন) মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টে অভিযান চালায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাংলাদেশ হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ আইন ২০১৪ অনুযায়ী লাইসেন্স ও নিবন্ধন সনদ না থাকায় ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন এবং লাইসেন্স ও নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত রিসোর্টটি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়।

 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাপিয়ে সেদিন দিনভর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শো-ডাউন চলে কুষ্টিয়ার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সবুজ মাঠে। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের তিন এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ, সরোয়ার জাহান বাদশা ও সেলিম আফতাফ জর্জ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, পরবর্তীতে তিনিও এমপি নির্বাচিত হন।

 

সম্প্রতি রোজ হলিডে পার্কের অবৈধ বাণিজ্য ও বিনোদনের আড়ালে অনৈতিক কাজ আলোচনায় আসার পর সেদিনের স্মৃতিচারণ করে এলাকাবাসী বলছেন, এখানে অপকর্ম হতে পারে আমরা সেদিনই ধারণা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের আনার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, এখানেই যাই ঘটুক মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তাই দিনের পর দিন নানান অপকর্ম চোখের সামনে দেখেও চুপ থেকেছেন তারা। ছাত্র-জনতার জয়ের পূর্বে এই রিসোর্টে হানিফ, আতাসহ আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর নেতৃবৃন্দের আনাগোনা ছিল।

 

তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরই এলাকাবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৭ আগস্ট সেখানে ভাঙচুরও করেন তারা। এরপরও টাকা আর ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রোজ ম্যানেজ করেন চারপাশ। চলতে থাকে উন্মুক্ত অনৈতিক কাজ। সেই কাজে ব্যবহার করা লালঘরগুলোর সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। অথচ পার্কে প্রবেশের জন্য সবার কাছ থেকে আদায় করা জনপ্রতি ৫০ টাকা।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ শুধু সেখানকার অনৈতিক কাজে নয়, পার্কের জন্য ক্ষতির শিকার তাদের ফসলি মাঠ। জিকের ক্যানেল সরু করে ফেলায় মাঠের পানি নিষ্কাশনে ঘটছে বিলম্ব। আর তাতেই পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘার জমির ফসল। এছাড়া মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করে বাইপাস সড়কে আসার পথও আটকে দেওয়া হয়েছে রোজ হলিডে পার্কের সীমানায়। এতে ফসল আনতে তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।

 

জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের লাইসেন্স ও নিবন্ধন সনদ না থাকায় তাদের এই জরিমানা করা হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৩ জুন) প্রতিবেদক দল পার্কটিতে সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় দেখতে পায়, বেশ চতুরতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানেই চলছে রমরমা দেহব্যবসা। পার্কে প্রবেশ করেই বামপাশে দেখা মেলে লাল রঙের চারটি ঘর। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে প্রবেশ করছেন নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণ চোখকান খুলে পার্কে ঘুরেই বোঝা যায়, পার্কের রাইডগুলোর কোনো ব্যবহার নেই। আর লাল রঙের ঘরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে দেহব্যবসার কাজে। বিষয়টি সন্দেহ হলে ডাকা হয় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুমিকে।

 

সুমি প্রতিবেদককে জানান, রেস্টুরেন্টের লাল রঙের রুমগুলো ভাড়া পেতে গুনতে হবে নগদ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া ভেতরের ভিআইপি রুমের ভাড়া ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। রুমে প্রবেশ করতে স্বামী-স্ত্রী হওয়া প্রয়োজন নেই, তবে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। পরে সুমিকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে রুমে আসলে কারা থাকছেন জানতে চাইলেই ঘটে বিপত্তি। ম্যানেজার সুমি একের পর এক ফোন দিতে থাকেন তার ঊর্ধ্বতনদের।

 

একপর্যায়ে একটি রুম খুলে বেরিয়ে আসেন দুই সন্তানের জননী এক নারী। দ্রুত তার কাছে গিয়ে দেখা যায় ভেতরে বিবস্ত্র পুরুষ। জানতে চাইলে কোনো লুকোচুরি না করে ওই নারী জানান, পুরুষটি তার পরকীয়া প্রেমিক। চার হাজার টাকা দিয়ে রুমটি ভাড়া নিয়েছেন দুপুর ১২টার দিকে। কিছুক্ষণ পরেই তারা চলে যাবেন। হট্টগোলের শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন আরও দুই তরুণ-তরুণী, তারা এসেছেন দুপুরেই। ওই তরুণীর ইতিপূর্বে ৪ বার বিয়ে হয়েছে। তিনি প্রবাসী যুবকের সাথে ফরিদপুর থেকে প্রেম করতে এসে রুম বাড়া নিয়ে ঢুকেছিলেন। দুই সন্তানের জননী সবার হাতেপায়ে ধরে আকুতি জানান, ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য। তারা নিয়মিতই পার্কের কাস্টমার হিসেবে আসেন বলে জানান।

 

ততক্ষণে পার্কের এজিএম সোনালি এসে প্রতিবেদকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। সেখানকার তিন নম্বর রুমেও চলছিল অনৈতিক কাজ। তবে সেখানে প্রভাবশালী কেউ আছেন বলে রুম খোলা থেকে বিরত থাকেন তারা। একপর্যায়ে পার্কের কর্মকর্তা সংবাদকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য বারবার আড়ালে যাওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, কর্তৃপক্ষের চাওয়া মতোই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মালিকের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কুষ্টিয়ার রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টে অভিযান,২ লাখ টাকা জরিমানা

আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন ফাঁকা মাঠের ভেতর কয়েকটি টিনশেড রুম ও দুয়েকটি রাইড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট। যেখানে বিনোদনের নামে চলতো রঙ্গমহল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা হয় রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট। রিসোর্ট হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের আস্তানা।

 

গত কয়েকদিন ধরে এই রিসোর্টে অনৈতিক কাজের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়াও আরও বেশকিছু অভিযোগ ছিল এই পার্ক এন্ড রিসোর্টের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৬ জুন) মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টে অভিযান চালায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাংলাদেশ হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ আইন ২০১৪ অনুযায়ী লাইসেন্স ও নিবন্ধন সনদ না থাকায় ২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন এবং লাইসেন্স ও নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত রিসোর্টটি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়।

 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রোজ হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাপিয়ে সেদিন দিনভর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শো-ডাউন চলে কুষ্টিয়ার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সবুজ মাঠে। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের তিন এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ, সরোয়ার জাহান বাদশা ও সেলিম আফতাফ জর্জ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, পরবর্তীতে তিনিও এমপি নির্বাচিত হন।

 

সম্প্রতি রোজ হলিডে পার্কের অবৈধ বাণিজ্য ও বিনোদনের আড়ালে অনৈতিক কাজ আলোচনায় আসার পর সেদিনের স্মৃতিচারণ করে এলাকাবাসী বলছেন, এখানে অপকর্ম হতে পারে আমরা সেদিনই ধারণা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের আনার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, এখানেই যাই ঘটুক মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তাই দিনের পর দিন নানান অপকর্ম চোখের সামনে দেখেও চুপ থেকেছেন তারা। ছাত্র-জনতার জয়ের পূর্বে এই রিসোর্টে হানিফ, আতাসহ আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর নেতৃবৃন্দের আনাগোনা ছিল।

 

তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরই এলাকাবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৭ আগস্ট সেখানে ভাঙচুরও করেন তারা। এরপরও টাকা আর ক্ষমতার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রোজ ম্যানেজ করেন চারপাশ। চলতে থাকে উন্মুক্ত অনৈতিক কাজ। সেই কাজে ব্যবহার করা লালঘরগুলোর সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। অথচ পার্কে প্রবেশের জন্য সবার কাছ থেকে আদায় করা জনপ্রতি ৫০ টাকা।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ শুধু সেখানকার অনৈতিক কাজে নয়, পার্কের জন্য ক্ষতির শিকার তাদের ফসলি মাঠ। জিকের ক্যানেল সরু করে ফেলায় মাঠের পানি নিষ্কাশনে ঘটছে বিলম্ব। আর তাতেই পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘার জমির ফসল। এছাড়া মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করে বাইপাস সড়কে আসার পথও আটকে দেওয়া হয়েছে রোজ হলিডে পার্কের সীমানায়। এতে ফসল আনতে তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।

 

জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের লাইসেন্স ও নিবন্ধন সনদ না থাকায় তাদের এই জরিমানা করা হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৩ জুন) প্রতিবেদক দল পার্কটিতে সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় দেখতে পায়, বেশ চতুরতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানেই চলছে রমরমা দেহব্যবসা। পার্কে প্রবেশ করেই বামপাশে দেখা মেলে লাল রঙের চারটি ঘর। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে প্রবেশ করছেন নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণ চোখকান খুলে পার্কে ঘুরেই বোঝা যায়, পার্কের রাইডগুলোর কোনো ব্যবহার নেই। আর লাল রঙের ঘরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে দেহব্যবসার কাজে। বিষয়টি সন্দেহ হলে ডাকা হয় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুমিকে।

 

সুমি প্রতিবেদককে জানান, রেস্টুরেন্টের লাল রঙের রুমগুলো ভাড়া পেতে গুনতে হবে নগদ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া ভেতরের ভিআইপি রুমের ভাড়া ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। রুমে প্রবেশ করতে স্বামী-স্ত্রী হওয়া প্রয়োজন নেই, তবে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। পরে সুমিকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে রুমে আসলে কারা থাকছেন জানতে চাইলেই ঘটে বিপত্তি। ম্যানেজার সুমি একের পর এক ফোন দিতে থাকেন তার ঊর্ধ্বতনদের।

 

একপর্যায়ে একটি রুম খুলে বেরিয়ে আসেন দুই সন্তানের জননী এক নারী। দ্রুত তার কাছে গিয়ে দেখা যায় ভেতরে বিবস্ত্র পুরুষ। জানতে চাইলে কোনো লুকোচুরি না করে ওই নারী জানান, পুরুষটি তার পরকীয়া প্রেমিক। চার হাজার টাকা দিয়ে রুমটি ভাড়া নিয়েছেন দুপুর ১২টার দিকে। কিছুক্ষণ পরেই তারা চলে যাবেন। হট্টগোলের শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন আরও দুই তরুণ-তরুণী, তারা এসেছেন দুপুরেই। ওই তরুণীর ইতিপূর্বে ৪ বার বিয়ে হয়েছে। তিনি প্রবাসী যুবকের সাথে ফরিদপুর থেকে প্রেম করতে এসে রুম বাড়া নিয়ে ঢুকেছিলেন। দুই সন্তানের জননী সবার হাতেপায়ে ধরে আকুতি জানান, ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য। তারা নিয়মিতই পার্কের কাস্টমার হিসেবে আসেন বলে জানান।

 

ততক্ষণে পার্কের এজিএম সোনালি এসে প্রতিবেদকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। সেখানকার তিন নম্বর রুমেও চলছিল অনৈতিক কাজ। তবে সেখানে প্রভাবশালী কেউ আছেন বলে রুম খোলা থেকে বিরত থাকেন তারা। একপর্যায়ে পার্কের কর্মকর্তা সংবাদকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য বারবার আড়ালে যাওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, কর্তৃপক্ষের চাওয়া মতোই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মালিকের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।