গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় নিহত ২ শতাধিক, ঘর ছাড়লেন ৩ লাখ ফিলিস্তিনি

- আপডেট সময় : ০৫:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
উত্তর গাজা থেকে গাজা সিটি পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
শনিবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরও একটি নারকীয় অধ্যায় যুক্ত হলো। গত ৪৮ ঘণ্টায় শুধু উত্তর গাজাতে ২০০-র বেশি শহীদ হয়েছেন, যা চলমান গণহত্যারই অংশ।
মিডিয়া অফিস আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজার এক হাজারের বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে এবং ৩ লাখের বেশি সাধারণ মানুষকে গাজা সিটির দিকে জোরপূর্বক ঠেলে দিয়েছে। অথচ সেখানকার অবকাঠামো এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স দলকে হতাহতের স্থানগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে অন্তত ১৪০ জনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শিবিরের তেল আল-জাতার, বেইত লাহিয়া ও অন্যান্য এলাকায় গৃহহীনদের জন্য স্থাপিত শত শত তাঁবু ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও কিছু দেশের সক্রিয় সহযোগিতা এই চলমান গণহত্যাকে আরও উৎসাহিত করছে।
গাজা সিটির পরিস্থিতি নিয়ে অফিস জানায়, সেখানে কোনো তাঁবু বা পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নেই। ফলে হাজার হাজার পরিবার রাস্তা, বিশেষ করে আল-জালাআ স্ট্রিট ও আল-সাফতাবি এলাকার পাশে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং টানা অবরোধ ও বোমাবর্ষণের মধ্যেই মানুষ বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার মিডিয়া অফিস এক জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে সীমান্ত খুলে মানবিক সহায়তা, খাদ্য, ওষুধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এদিকে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় সফরের সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে—যা সফরের আগের চার দিনে নিহতের সংখ্যার (প্রায় ১০০ জন) চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি।
এছাড়া গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ সব ধরনের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। আর ১৮ মার্চ ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকেও সরে এসে আবারও গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।