ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরম ফিল আপ করেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কোনো শিক্ষার্থী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৬:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফরম ফিলাপ করলেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কোনো শিক্ষার্থী। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিস্ময় ও ক্ষোভ।

 

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে জর্জরিত। চলতি বছর ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও কেউই পরীক্ষায় বসেনি। এলাকায় খোঁজ নিয়ে এই ১৫ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কোনো সন্ধানও মেলেনি।

 

বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশের হালও হতাশাজনক। জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, শ্রেণিকক্ষের নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, পাঠদানও অনেকটাই গরহাজির।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বৃষ্টি হলে ক্লাশ হয় না, বেঞ্চ ভাঙা, গরমে ক্লাশ রুমে বসা যায় না ফ্যান না থাকার কারণে। পড়তে ভালো লাগে না। অনেক সময় শিক্ষকই আসেন না।

 

এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ দাবি করলেও প্রকৃত সংখ্যা শতাধিক নয়। অথচ শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। এদের অনেকেই নিয়মিত নন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, সন্তানদের স্কুলে পাঠাই একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়; কিন্তু স্কুলের পরিবেশই যদি না থাকে, তাহলে পড়বে কিভাবে?

 

এতদিন ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলেও, এবার সেই কেন্দ্রে তাদের কেউ উপস্থিত ছিল না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্র সচিব ও বাগোয়ান কেসিভিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম টম।

 

বিদ্যালয়টিতে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী জানান, এবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫ জন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তবে দুঃখজনকভাবে তারা কেউই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য, কিন্তু তাতে সফল হইনি।

 

ঘটনাটি দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নজর এড়ায়নি। একাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফরম ফিল আপ করেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কোনো শিক্ষার্থী

আপডেট সময় : ০৩:৫৬:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

ফরম ফিলাপ করলেও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি কোনো শিক্ষার্থী। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিস্ময় ও ক্ষোভ।

 

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০২ সালে এমপিওভুক্ত হওয়া এই বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে জর্জরিত। চলতি বছর ১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও কেউই পরীক্ষায় বসেনি। এলাকায় খোঁজ নিয়ে এই ১৫ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কোনো সন্ধানও মেলেনি।

 

বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশের হালও হতাশাজনক। জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, শ্রেণিকক্ষের নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, পাঠদানও অনেকটাই গরহাজির।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বৃষ্টি হলে ক্লাশ হয় না, বেঞ্চ ভাঙা, গরমে ক্লাশ রুমে বসা যায় না ফ্যান না থাকার কারণে। পড়তে ভালো লাগে না। অনেক সময় শিক্ষকই আসেন না।

 

এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ দাবি করলেও প্রকৃত সংখ্যা শতাধিক নয়। অথচ শিক্ষক রয়েছেন ১০ জন। এদের অনেকেই নিয়মিত নন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, সন্তানদের স্কুলে পাঠাই একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়; কিন্তু স্কুলের পরিবেশই যদি না থাকে, তাহলে পড়বে কিভাবে?

 

এতদিন ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলেও, এবার সেই কেন্দ্রে তাদের কেউ উপস্থিত ছিল না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্র সচিব ও বাগোয়ান কেসিভিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম টম।

 

বিদ্যালয়টিতে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী জানান, এবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫ জন ছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তবে দুঃখজনকভাবে তারা কেউই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাদের পরীক্ষায় বসানোর জন্য, কিন্তু তাতে সফল হইনি।

 

ঘটনাটি দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের নজর এড়ায়নি। একাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।