দুধ কিনতে না পেরে সন্তানকে বিক্রি করলেন মা

- আপডেট সময় : ০২:০২:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
সাতক্ষীরার আশাশুনির কাদিকাটি গ্রামে নিজের সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। তার স্বামী কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেন (২৮) সন্তানের কোনো দায়িত্ব না নেওয়ায় এমন কাজ করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫) সন্তানের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও দুধ কিনতে না পেরে ১৪ দিনের নবজাতক শিশু খাদিজা খাতুনকে ২০,০০০ টাকায় এক চা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। আশামনি বলেন, “যাতে আমার সন্তান যেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকে, সেজন্য আমি এ কাজ করেছি।”
আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতলায় আবারও টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয় মাস আগে হোসনে আরাকে বিয়ে করেছেন শামীম। এরপর থেকে সন্তানদের নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছিলেন তিনি।
আশামনি আরও জানান, ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় কুল্যার মোড়ের একটা ক্লিনিকে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন তিনি। ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ওষুধ ও দুধ কিনতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। পরে নিজের নবজাতককে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান রবিউল-কাজল দম্পতির কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
নবজাতকের ক্রেতা চা বিক্রেতা রবিউলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কাজল ফোন ধরেন।
কাজল বলেন, “দরদাম করে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।”
এদিকে এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ার একটি বাড়িতে পঞ্চম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনের সঙ্গে বসবাস করছিলেন কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেন (২৮)। শামীম পেশায় একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রি। মাঝেমধ্যে তিনি ইটভাটায়ও কাজ করেন।
তারা আরও জানান, স্বামীর পঞ্চম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর গ্রামে আসেন আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও হোসনে আরার দেখা পান তিনি। এসময় শামীম ও আশামনি বাগবিতণ্ডায় জড়ালে কৌশলে পালিয়ে যান হোসনে আরা খাতুন। এরপরই শিশুটিকে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হয়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেখানে যান সেখানেই বিয়ে করেন শামীম। ২০১৬ সালে তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিয়ে করলেও সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর উপজেলার বদরতলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে বিয়ে করেন তিনি। সেটিও টেকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করেন শামীম। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে শামীম ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে আশামনিকে বিয়ে করেন। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যান বিলকিস।
এ বিষয়ে কাদাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দীপংকর কুমার সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।”