ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেসবুক-অনলাইনে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় কার্টনবন্দি নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্বামী অলোক রঞ্চন গোস্বামী (৩৯) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইনে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

স্ত্রীর মরদেহ কার্টনবন্দি করে ভাড়ায় প্রাইভেট কার নিয়ে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় অন্যত্র মরদেহ ফেলে রেখে চলে তিনি। গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

 

গ্রেপ্তার অলোক রঞ্চন গোস্বামী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। স্ত্রী বিউটি গোস্বামী (৩৮) এবং দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকার উত্তরা এলাকায় থাকতেন।

 

গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের এগারেশ্রী এলাকায় মিতরা-বরুন্ডি সড়কের একটি বাঁশঝাড় থেকে কার্টনবন্দি অবস্থায় বিউটি গোস্বামীর মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিক মরদেহের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশের ঢাকার ক্রাইম সিন ইউনিট ও সিআইডি নিহতের পরিচয় উদঘাটন করে। নিহত বিউটি গোস্বামীর বাবার বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার আদিতমারী এলাকায়।

 

এ ঘটনায় পর দিন শনিবার নিহত গৃহবধূর বাবা নিহার রঞ্জন গোস্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় রোববার সকালে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকা থেকে নিহত বিউটির স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে আটক করে পুলিশ। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আসামিকে মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে আসামি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

 

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসামি অলোক রঞ্জন আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানান, তার স্ত্রী বিউটি গোস্বামী অধিকাংশ সময় ফেসবুক, অনলাইন ব্যবসা ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতেন না। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের কারণে প্রায় তিন বছর ধরে আলাদা ঘরে ঘুমাতেন তারা।

 

গত বুধবার (২ এপ্রিল) তার ও স্ত্রী বিউটির মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। ওই দিন স্ত্রী রান্নাঘরে রান্না করতে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে বিউটির মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) কার্টনে স্ত্রীর মরদেহ ভরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। প্রাইভেট কারের পেছনের আসনে কার্টনটি রেখে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে এক সহযোগীকে নিয়ে মানিকগঞ্জের এগারোশ্রী এলাকায় আসেন। এরপর প্রাইভেট কার চালকের চোখ ফাঁকি দিয়ে সহযোগীর সহযোগিতায় কার্টনবন্দি স্ত্রীর মরদেহ একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে চলে যান।

 

এ ব্যাপারে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ফেসবুকে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে গ্রেপ্তার আসামি অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় অপর আসামি (অলোকের সহযোগী) পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফেসবুক-অনলাইনে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন স্বামী

আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় কার্টনবন্দি নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্বামী অলোক রঞ্চন গোস্বামী (৩৯) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইনে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

স্ত্রীর মরদেহ কার্টনবন্দি করে ভাড়ায় প্রাইভেট কার নিয়ে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় অন্যত্র মরদেহ ফেলে রেখে চলে তিনি। গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

 

গ্রেপ্তার অলোক রঞ্চন গোস্বামী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। স্ত্রী বিউটি গোস্বামী (৩৮) এবং দুই শিশু সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকার উত্তরা এলাকায় থাকতেন।

 

গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের এগারেশ্রী এলাকায় মিতরা-বরুন্ডি সড়কের একটি বাঁশঝাড় থেকে কার্টনবন্দি অবস্থায় বিউটি গোস্বামীর মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিক মরদেহের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশের ঢাকার ক্রাইম সিন ইউনিট ও সিআইডি নিহতের পরিচয় উদঘাটন করে। নিহত বিউটি গোস্বামীর বাবার বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার আদিতমারী এলাকায়।

 

এ ঘটনায় পর দিন শনিবার নিহত গৃহবধূর বাবা নিহার রঞ্জন গোস্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় রোববার সকালে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকা থেকে নিহত বিউটির স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামীকে আটক করে পুলিশ। এরপর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আসামিকে মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারকের কাছে আসামি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

 

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসামি অলোক রঞ্জন আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানান, তার স্ত্রী বিউটি গোস্বামী অধিকাংশ সময় ফেসবুক, অনলাইন ব্যবসা ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতেন না। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের কারণে প্রায় তিন বছর ধরে আলাদা ঘরে ঘুমাতেন তারা।

 

গত বুধবার (২ এপ্রিল) তার ও স্ত্রী বিউটির মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। ওই দিন স্ত্রী রান্নাঘরে রান্না করতে গেলে পেছন থেকে মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে বিউটির মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) কার্টনে স্ত্রীর মরদেহ ভরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। প্রাইভেট কারের পেছনের আসনে কার্টনটি রেখে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে এক সহযোগীকে নিয়ে মানিকগঞ্জের এগারোশ্রী এলাকায় আসেন। এরপর প্রাইভেট কার চালকের চোখ ফাঁকি দিয়ে সহযোগীর সহযোগিতায় কার্টনবন্দি স্ত্রীর মরদেহ একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে চলে যান।

 

এ ব্যাপারে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ফেসবুকে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বলে গ্রেপ্তার আসামি অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় অপর আসামি (অলোকের সহযোগী) পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।