শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান লে পেনের

- আপডেট সময় : ০১:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তহবিল আত্মসাতের দায়ে ফ্রান্সের উগ্র-ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরই গতকাল রবিবার প্যারিসের প্লেস ভবঁ-এ হাজারো সমর্থক জড়ো হয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
সেখানে লে পেন নিজে উপস্থিত হয়ে আদালতের রায়কে রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে আমেরিকান নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আদর্শ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন।
প্যারিসের একটি আদালত সম্প্রতি মেরিন লে পেন এবং তার দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)-এর ২৪ জন সদস্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল থেকে প্রায় ৬ লাখ ইউরো আত্মসাতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে।
এই রায় অনুযায়ী, লে পেনকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য যেকোনো নির্বাচিত রাজনৈতিক পদে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে-যা কার্যত তাকে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে ছিটকে ফেলে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লে পেন বলেন, “আমি মার্টিন লুথার কিং-এর মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিশ্বাস করি। এই রায় শুধুমাত্র আমার নয়, আমাদের সকলের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত।’ তিনি দাবি করেন, এই রায় তার রাজনৈতিক উত্থান রুখতে একটি ‘প্রতিষ্ঠানিক ষড়যন্ত্র’।
ন্যাশনাল র্যালি-র বর্তমান সভাপতি জর্ডান বার্দেলাও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে বিচারিক স্বৈরাচার বলে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, এই রায় শুধু লে পেনকে নয়, ফ্রান্সের গণতন্ত্রকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
সমাবেশের পরিবেশ ছিল তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ যদিও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। সমর্থকদের ভাষ্য অনুযায়ী, লে পেনের বিরুদ্ধে রায় ফ্রান্সে ডানপন্থী রাজনীতির অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা।
অন্যদিকে ফ্রান্সের বামপন্থী ও মধ্যপন্থী দলগুলো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্লেস দে লা রিপাবলিক ও সেন্ট ডেনিতে অনুষ্ঠিত পাল্টা সমাবেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান জানানো হয়।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁর দল ‘রেনেসাঁ’র সভাপতি গ্যাব্রিয়েল আত্তাল বলেন, ‘লে পেনের সমাবেশ মূলত বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।’
এ ছাড়া বামপন্থী এলএফআই দলের নেতা জিন-লুক মেলানশন আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘এটি একটি স্পষ্ট রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র।’
২০২৭ নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক অচলাবস্থা?
এই রায়ের ফলে ফ্রান্সের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকেরই আশঙ্কা, লে পেনের অনুপস্থিতিতে তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে জর্ডান বার্দেলা নির্বাচনি ময়দানে এলেও তিনি এখন পর্যন্ত লে পেনের মতো জনপ্রিয়তা বা ক্যারিশমা অর্জন করতে পারেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র করবে এবং ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নতুন গতিপথে প্রবাহিত হতে পারে।
মেরিন লে পেনের বিরুদ্ধে রায় তার প্রতিক্রিয়া এবং তা ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে এক অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান দেওয়া হলেও এর বাস্তব রূপ কেমন হবে এবং তা ফরাসি রাজনীতিকে কোনদিকে নিয়ে যাবে-তা সময়ই বলে দেবে।