গাজাবাসীদের সমর্থনে জবিতে সংহতি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল

- আপডেট সময় : ০৪:৪০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে মুসলিম হত্যার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সংহতি সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)। পাশাপাশি বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে গাজার শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে শিক্ষক সমিতি সংহতি সমাবেশ আয়োজন করে এবং জোহরের নামাজের পর কেন্দ্রীয় মসজিদ এর সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়।
সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সেক্রেটারি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংহতি সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রেজাউল করিম বলেন, আমরা অত্যন্ত ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বুঝি না একটা জাতির উপরে এভাবে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে কিন্তু বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ ও সংগঠনের কোনো টনক নড়ছে না। আমরা প্রতিবাদস্বরূপ ইসরায়েলের সকল পণ্য বয়কট করতে পারি, ফিলিস্তিনিদের জন্য ফান্ড তৈরী করতে পারি। আমাদের জায়গা থেকে যা যা করা সম্ভব আমরা করবো। আমরা মহান রবের দরবারে দোয়া করি যাতে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিলিস্তিনিদেরকে হেফাজত করেন।
এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সাবিনা শারমিন বলেন, আমরা অনেকেই ভাবি আমরা কিছু করতে পারবো না ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। কিন্তু অন্তত নিজেদের বিবেকের কাছে সৎ থাকার জন্য হলেও আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাতে হবে। আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই এবং প্রার্থনা করি যেন মহান আল্লাহ তায়ালা ফিলিস্তিনিদেরকে হেফাজত করেন।
এসময় সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের এখান থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে তারা এই বর্বর হামলার অফিশিয়ালি প্রতিবাদ জানায়। আমরা সামনের দিনেও এমন কর্মসূচী অব্যাহত রাখবো।
সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন তিনদফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
তিনদফা কর্মসূচী:
১. গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে;
২. আমেরিকা দূতাবাসের উদ্দেশ্যে লংমার্চ ঘোষণা এবং স্মারকলিপি প্রদান;
৩. সকল ইসরাইলী পণ্য নিষিদ্ধকরণ।
পরবর্তীতে বাদ জোহর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম কর্তৃক দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে সমাবেশ সমাপ্ত করা হয়। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদ এর সামনে থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় মিছিলে তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘মুসলিম বিশ্ব ঐক্য গড়, ফিলিস্তান স্বাধীন করো’, ‘গাজায় হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘বদরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নেতানিয়াহুর বিচার নিশ্চিত করতে হবে।আগামী বৃহস্পতিবার আমরা ঐকবদ্ধভাবে আমেরিকার দূতাবাসে ঘেরাও করবো এবং স্মারকলিপি দিবো।
জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বায়তুল আকসা আমাদের প্রথম কিবলা। মুসলিম কমিউনিটিকে এই কিবলা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আমরা প্রত্যেক মুসলিম দেশকে সব সেক্টরে অন্য দেশের উপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার আহ্বান জানাই।
জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি কেএম রাকিব বলেন, এখন আর সমবেদন, সংহতি ও বিবৃতি সময় নেই। এখন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একত্রিত হয়ে একশনে যাওয়ার সময়। ইসরায়েল এবং আমেরিকা তো জেগেই আছে, তারা জেগেই বর্বরতা চালাচ্ছে। এখন মুসলিম বিশ্বকে জাগান। প্রয়োজনে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর দূতাবাস ঘেরাও করে তাদেরকে জাগ্রত করুন বর্বর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য। পাশাপাশি বিকল্প পণ্য নিশ্চিত করে সকল ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিতে হবে।