ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতারিতে ‘সারপ্লাস বক্স’, প্রশংসায় ভাসছেন ডিআইজি রেজাউল

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ ০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লাইনে লাইনে সাজানো ইফতারির প্লেট। সঙ্গে নানা রকম খাবার ও পানীয়। কিন্তু প্রতিটি প্লেটের সামনে একটি করে খালি কৌটা (বক্স)। কৌটাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সারপ্লাস বক্স’। গায়ে লেখা রয়েছে- ‘প্রয়োজনে আপনার অতিরিক্ত খাবার সারপ্লাস বক্সে রাখুন’। অর্থাৎ যিনি যে খাবারটি খাবেন না বা কম খান তিনি অতিরিক্ত খাবার এই সারপ্লাস বক্সে রাখবেন। সেই অতিরিক্ত খাবার দেওয়া হবে এতিম-দুস্থদের।

 

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনের সম্মানে বাংলোতে ইফতারির আয়োজন করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক। সেখানেই অতিথিদের অতিরিক্ত খাবার সংরক্ষণ করে এতিম-দুস্থদের দেওয়ার জন্য এই সারপ্লাস বক্স দেন তিনি।

 

পরিকল্পনা মতো ৪০টি সারপ্লাস বক্সে প্রায় ১০০ শিশুর খাওয়ার মতো ইফতারি জমা পড়ে। ইফতারি শেষে ডিআইজি নিজের গাড়িতে করে সেই খাবার নিয়ে ছুটে যান পার্শ্ববর্তী খুলনা সদর এলাকার একটি এতিমখানায়। সেখানে এতিমদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয় এই সুস্বাদু নানা খাবার দিয়ে।

ডিআইজি রেজাউল হকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এর আগেও খুলনায় যোগদানের পর কয়েকশ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে বদলি করার জন্য প্রকাশ্যে লটারির ব্যবস্থা করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, ‘এটি একেবারে নতুন উদ্যোগ। এটি সব ইফতার মাহফিলে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক খাবার যেটা আসলে মানুষ খেতে চায় না তা নষ্ট না হয়ে যাদের আসলে খাবার দরকার তাদের দেওয়া যাবে। এতে খাবার অপচয় না হয়ে বরং পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের খাবারের জন্য সহায়ক হবে।’

ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া খুলনা জেলা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আহমদ মুসা রঞ্জু বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ আগে দেখিনি। এটা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। এটির মাধ্যমে দুই দিকে উপকার হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্লেটে থাকা কিছু আইটেম অনেকে খেতে চান না- ফলে বাধ্য হয়ে সে খাবার না খেয়ে বা আংশিক খেয়ে উঠে যান। ফলে খাবার অপচয় হয়। ডিআইজির এই উদ্যোগের ফলে সেই খাবার যদি খাওয়ার আগেই সারপ্লাস বক্সে উঠিয়ে রাখা যায় তাহলে দরিদ্র মানুষ বা পথশিশুদের মাঝে বিতরণ করা যাবে।’

 

খুলনা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও একুশে টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি বলেন, ‘ডিআইজির বাংলোতে ইফতারে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটা সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। প্রতিদিন বিভিন্ন ইফতারি অনুষ্ঠানে এ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

 

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আসলে আমি আসার পরে তো এসপিদের সঙ্গেও সেভাবে গেটটুগেদার হয়নি। এছাড়া খুবই সিলেকটিভ লোকদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি ইফতারির আয়োজন করা হয়েছিল।সেখানে আমি ভাবলাম- অনেকেই তো অনেক কিছু খায় না। অনেকে ইফতারিতে চপ খায়, আবার অনেকেই তা পছন্দ করে না। যে কারণে ভাবলাম, এমন একটা বক্স যদি দেই তারা খাবারের আগেই সেখানে রাখতে পারবে যেটা খেতে চায় না। সে ধারণা থেকে কাজটা করা হয়েছে। উদ্বৃত্ত সেই খাবারগুলো ইফতারির সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পার্শ্ববর্তী একটি এতিমখানায় শিশুদের সঙ্গে এবং পথশিশুদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। পরে অনেকেই ফোন দিয়ে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই, তবে বিভিন্নভাবে এ উদ্যোগ সব ইফতার মাহফিলে ছড়িয়ে দিতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ইফতারিতে ‘সারপ্লাস বক্স’, প্রশংসায় ভাসছেন ডিআইজি রেজাউল

আপডেট সময় : ১০:৩২:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

লাইনে লাইনে সাজানো ইফতারির প্লেট। সঙ্গে নানা রকম খাবার ও পানীয়। কিন্তু প্রতিটি প্লেটের সামনে একটি করে খালি কৌটা (বক্স)। কৌটাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সারপ্লাস বক্স’। গায়ে লেখা রয়েছে- ‘প্রয়োজনে আপনার অতিরিক্ত খাবার সারপ্লাস বক্সে রাখুন’। অর্থাৎ যিনি যে খাবারটি খাবেন না বা কম খান তিনি অতিরিক্ত খাবার এই সারপ্লাস বক্সে রাখবেন। সেই অতিরিক্ত খাবার দেওয়া হবে এতিম-দুস্থদের।

 

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনের সম্মানে বাংলোতে ইফতারির আয়োজন করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক। সেখানেই অতিথিদের অতিরিক্ত খাবার সংরক্ষণ করে এতিম-দুস্থদের দেওয়ার জন্য এই সারপ্লাস বক্স দেন তিনি।

 

পরিকল্পনা মতো ৪০টি সারপ্লাস বক্সে প্রায় ১০০ শিশুর খাওয়ার মতো ইফতারি জমা পড়ে। ইফতারি শেষে ডিআইজি নিজের গাড়িতে করে সেই খাবার নিয়ে ছুটে যান পার্শ্ববর্তী খুলনা সদর এলাকার একটি এতিমখানায়। সেখানে এতিমদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয় এই সুস্বাদু নানা খাবার দিয়ে।

ডিআইজি রেজাউল হকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া খুলনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এর আগেও খুলনায় যোগদানের পর কয়েকশ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে বদলি করার জন্য প্রকাশ্যে লটারির ব্যবস্থা করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, ‘এটি একেবারে নতুন উদ্যোগ। এটি সব ইফতার মাহফিলে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক খাবার যেটা আসলে মানুষ খেতে চায় না তা নষ্ট না হয়ে যাদের আসলে খাবার দরকার তাদের দেওয়া যাবে। এতে খাবার অপচয় না হয়ে বরং পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের খাবারের জন্য সহায়ক হবে।’

ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া খুলনা জেলা ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আহমদ মুসা রঞ্জু বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ আগে দেখিনি। এটা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। এটির মাধ্যমে দুই দিকে উপকার হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্লেটে থাকা কিছু আইটেম অনেকে খেতে চান না- ফলে বাধ্য হয়ে সে খাবার না খেয়ে বা আংশিক খেয়ে উঠে যান। ফলে খাবার অপচয় হয়। ডিআইজির এই উদ্যোগের ফলে সেই খাবার যদি খাওয়ার আগেই সারপ্লাস বক্সে উঠিয়ে রাখা যায় তাহলে দরিদ্র মানুষ বা পথশিশুদের মাঝে বিতরণ করা যাবে।’

 

খুলনা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও একুশে টেলিভিশনের খুলনা প্রতিনিধি বলেন, ‘ডিআইজির বাংলোতে ইফতারে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটা সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। প্রতিদিন বিভিন্ন ইফতারি অনুষ্ঠানে এ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

 

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আসলে আমি আসার পরে তো এসপিদের সঙ্গেও সেভাবে গেটটুগেদার হয়নি। এছাড়া খুবই সিলেকটিভ লোকদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি ইফতারির আয়োজন করা হয়েছিল।সেখানে আমি ভাবলাম- অনেকেই তো অনেক কিছু খায় না। অনেকে ইফতারিতে চপ খায়, আবার অনেকেই তা পছন্দ করে না। যে কারণে ভাবলাম, এমন একটা বক্স যদি দেই তারা খাবারের আগেই সেখানে রাখতে পারবে যেটা খেতে চায় না। সে ধারণা থেকে কাজটা করা হয়েছে। উদ্বৃত্ত সেই খাবারগুলো ইফতারির সঙ্গে সঙ্গেই আমরা পার্শ্ববর্তী একটি এতিমখানায় শিশুদের সঙ্গে এবং পথশিশুদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। পরে অনেকেই ফোন দিয়ে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই, তবে বিভিন্নভাবে এ উদ্যোগ সব ইফতার মাহফিলে ছড়িয়ে দিতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।’