ঢাকা ০৮:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুদের টাকা দিতে না পেরে ১৩ বছরের মেয়েকে ৪০ বছরের যুবকের সঙ্গে বিয়ে!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মধ্য টিয়াখালী গ্রামে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ৪০ বছরের যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই মেয়ের ফুফু জোর করে এই বিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর মা-বাবার। শিশুটিকে তুলে নেওয়ার হুমকিতে আতঙ্কে পরিবার। তবে অভিযুক্তের দাবি, তিনি বিয়ে করেননি। পাওয়া টাকা নিতে চাপ দিচ্ছেন। 

মধ্য টিয়াখালী গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া (১৩)। তার বাবা নজরুল সিকদার ফুফু জাহানারা বেগমের মাধ্যমে বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। দেনায় জর্জরিত নজরুল ৪ মাসেও পরিশোধ করতে পারেননি সেই টাকা। দেনার চাপে নিজ বসতবাড়ি বিক্রি করে হয়েছেন দেশান্তরী। 

জাান যায়, এক মাস আগে ফুফু জাহানার বেগম শিশু আছিয়া ও তার মা খাদিজা বেগমকে বেড়াতে নিয়ে যান তাদের বাড়িতে। এসময় বেড়াতে আসার নাম করে আছিয়ার মায়ের অজান্তে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয় শিপন হাওলাদারের সঙ্গে। পরের দিন আছিয়ার কান্নাকাটিতে বিষয়টি জানতে পারেন তার মা। শিপন হাওলাদারসহ ফুফু জাহানারা দলবল নিয়ে আছিয়াকে তুলে নেওয়ার দু’দফা চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর বাঁধায় তা পণ্ড হয়।  
 
শিশু আছিয়া বলছে, ‘শিপন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তার লোকজন নিয়ে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে জোর করে কাগজে সই করে নেয়। হুজুর দিয়ে কলমা পড়ায়। আমি এই প্রতারক শিপনের বিচার চাই। আমি লেখাপড়া করতে চাই।’ 

শিশু আছিয়ার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এক মাস আগে আমার ননদ জাহানারা আমাকে ফোন দিয়ে তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে। পরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যাই। রাত আটটার দিকে আমার ননদ জাহানারা ও শিপন আছিয়াকে নিয়ে পাশের বাড়ি বেড়াতে যায়। রাত বারোটার দিকে   ফিরে আছিয়া কাঁদতে থাকে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় আমাকে জোর করে শিপনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি বিয়েতে রাজি না। আমাকে যদি তোমরা ওর সাথে দিয়ে দাও তাহলে আমি বিষ খেয়ে মরে যাব। আমি মেয়ে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। আমি ওই বাড়ি থেকে মেয়ে নিয়ে কলাপাড়া চলে আসি। পরে শিপন মেয়ে নিতে এলে মেয়ে আমি দেইনি। আমি শিপনের বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে আছিয়ার বাবা নজরুল সিকদার বলেন, ‘আমি ব্যবসায় লোকসানে পরে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে যাই। পরে আমার বোনের মাধ্যমে শিপনের কাছ থেকে আট আনি সুদে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছি। পাওনাদারকে টাকা দিয়ে কাজে চলে যাই। পরে শুনি আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে বোনের বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে শিপন, আমার বোন জাহানারাসহ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে জোর করে আমার মেয়েকে কালিমা পড়ায়। আমার মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেব না। এসব কথা শুনে আমার কাছে ৭ লাখ টাকা পাবে বলে দাবি করে শিপন।’ 

 

এলাকার বাসিন্দা মো. ছোবাহান জানান, ‘শুনেছি আছিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শিপনসহ ৪/৫ জন লোক মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা বাধা দিই। পরে শিপন লোকজন নিয়ে চলে যায়।’ 

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিপন হাওলাদার বলেন, ‘আমি আছিয়াকে বিয়ে করিনি। নজরুল শিকদারের বাড়িতে গিয়েছি তার কাছে টাকা পাব এ জন্য। তাকে বাড়িতে না পেয়ে ফিরে আসি।’ 

 

কলাপাড়া মহিলা বিষয় কর্মকর্তা তাসলিমা আখতার বলেন, ‘বিষয়টি শুনে শিশু আছিয়ার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। বাল্যবিয়ে বাস্তবায়ন না হয়, এ জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনে উপজেলা পরিষদ, মহিলা অধিদপ্তর ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে হতে দেওয়া যাবে না। মেয়েটি যাতে সুন্দরভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সুদের টাকা দিতে না পেরে ১৩ বছরের মেয়েকে ৪০ বছরের যুবকের সঙ্গে বিয়ে!

আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মধ্য টিয়াখালী গ্রামে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ৪০ বছরের যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই মেয়ের ফুফু জোর করে এই বিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর মা-বাবার। শিশুটিকে তুলে নেওয়ার হুমকিতে আতঙ্কে পরিবার। তবে অভিযুক্তের দাবি, তিনি বিয়ে করেননি। পাওয়া টাকা নিতে চাপ দিচ্ছেন। 

মধ্য টিয়াখালী গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া (১৩)। তার বাবা নজরুল সিকদার ফুফু জাহানারা বেগমের মাধ্যমে বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। দেনায় জর্জরিত নজরুল ৪ মাসেও পরিশোধ করতে পারেননি সেই টাকা। দেনার চাপে নিজ বসতবাড়ি বিক্রি করে হয়েছেন দেশান্তরী। 

জাান যায়, এক মাস আগে ফুফু জাহানার বেগম শিশু আছিয়া ও তার মা খাদিজা বেগমকে বেড়াতে নিয়ে যান তাদের বাড়িতে। এসময় বেড়াতে আসার নাম করে আছিয়ার মায়ের অজান্তে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয় শিপন হাওলাদারের সঙ্গে। পরের দিন আছিয়ার কান্নাকাটিতে বিষয়টি জানতে পারেন তার মা। শিপন হাওলাদারসহ ফুফু জাহানারা দলবল নিয়ে আছিয়াকে তুলে নেওয়ার দু’দফা চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর বাঁধায় তা পণ্ড হয়।  
 
শিশু আছিয়া বলছে, ‘শিপন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তার লোকজন নিয়ে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে জোর করে কাগজে সই করে নেয়। হুজুর দিয়ে কলমা পড়ায়। আমি এই প্রতারক শিপনের বিচার চাই। আমি লেখাপড়া করতে চাই।’ 

শিশু আছিয়ার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এক মাস আগে আমার ননদ জাহানারা আমাকে ফোন দিয়ে তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে। পরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যাই। রাত আটটার দিকে আমার ননদ জাহানারা ও শিপন আছিয়াকে নিয়ে পাশের বাড়ি বেড়াতে যায়। রাত বারোটার দিকে   ফিরে আছিয়া কাঁদতে থাকে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় আমাকে জোর করে শিপনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি বিয়েতে রাজি না। আমাকে যদি তোমরা ওর সাথে দিয়ে দাও তাহলে আমি বিষ খেয়ে মরে যাব। আমি মেয়ে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। আমি ওই বাড়ি থেকে মেয়ে নিয়ে কলাপাড়া চলে আসি। পরে শিপন মেয়ে নিতে এলে মেয়ে আমি দেইনি। আমি শিপনের বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে আছিয়ার বাবা নজরুল সিকদার বলেন, ‘আমি ব্যবসায় লোকসানে পরে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে যাই। পরে আমার বোনের মাধ্যমে শিপনের কাছ থেকে আট আনি সুদে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছি। পাওনাদারকে টাকা দিয়ে কাজে চলে যাই। পরে শুনি আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে বোনের বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে শিপন, আমার বোন জাহানারাসহ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে জোর করে আমার মেয়েকে কালিমা পড়ায়। আমার মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেব না। এসব কথা শুনে আমার কাছে ৭ লাখ টাকা পাবে বলে দাবি করে শিপন।’ 

 

এলাকার বাসিন্দা মো. ছোবাহান জানান, ‘শুনেছি আছিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শিপনসহ ৪/৫ জন লোক মেয়েকে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা বাধা দিই। পরে শিপন লোকজন নিয়ে চলে যায়।’ 

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিপন হাওলাদার বলেন, ‘আমি আছিয়াকে বিয়ে করিনি। নজরুল শিকদারের বাড়িতে গিয়েছি তার কাছে টাকা পাব এ জন্য। তাকে বাড়িতে না পেয়ে ফিরে আসি।’ 

 

কলাপাড়া মহিলা বিষয় কর্মকর্তা তাসলিমা আখতার বলেন, ‘বিষয়টি শুনে শিশু আছিয়ার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। বাল্যবিয়ে বাস্তবায়ন না হয়, এ জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনে উপজেলা পরিষদ, মহিলা অধিদপ্তর ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে হতে দেওয়া যাবে না। মেয়েটি যাতে সুন্দরভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।’