ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
‘চন্দ্রিমা উদ্যান’ নাম বদলে পুনরায় ‘জিয়া উদ্যান’ ঘোষণা পাওনা টাকা না পেয়ে বতসবাড়ির মাটি কেটে নিলেন যুবদল নেতা! ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ জসিমের মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঈদে বাসা-বাড়িসহ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় ডিএমপির ১৪ নির্দেশনা পেকুয়ায় ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা,অভিযুক্ত আটক জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে মারামারি লুইজিয়ানায় নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সিনেমা প্রদর্শনীর অনুমতি দিতে নির্দেশ ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ স্থগিত করলেন হাইকোর্ট কুরআনের আলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে: শিবির সেক্রেটারি

ঢামেক চিকিৎসকদের সাফল্য, টেঁটা অপসারণে বাচঁলেন রোগী

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৪৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুখমণ্ডলের হাড় ভেদ করে টেঁটার ফলা ঢুকে গেছে মস্তিষ্কের পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে। অবস্থান একেবারে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে। রক্তনালিতে আঘাত হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দাঁড়াতো শূন্যের কোঠায়। এমন বিপজ্জনকভাবে বিদ্ধ এক রোগীর মুখমণ্ডল থেকে সফলভাবে টেঁটা অপসারণ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

আজ বুধবার (১৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার সফল অস্ত্রোপচারের তথ্য জানায়। আক্রান্ত রোগী মো. আশরাফুল (২৬) নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। সংঘর্ষে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

গত ১২ মার্চ ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিট প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাতের নেতৃত্বে অত্যন্ত জটিল এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা অস্ত্রোপচারে আরও ছিলেন একই বিভাগের ডা. কাজী ইরফান সোবহান, ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ, ডা. শুভ্র সাহা, ডা. হাসান, ডা. পুনম রায় এবং অ্যানেস্থিশিওলজিস্ট ডা. আল বিরুনী।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। তার ডান চোখের নিচ দিয়ে টেঁটার একটি ফলা প্রবেশ করে মুখমণ্ডলের হাড় এবং বায়ু কুঠুরি ভেদ করে মস্তিষ্কের মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে অবস্থান করছিল। সিটি স্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে এর অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, এই রক্তনালির ইনজুরিতে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এমন জটিল একটা পরিস্থিতিতে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ, অ্যানেস্থিশিয়া বিভাগ এবং চক্ষু বিভাগ রোগীটির অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এক ঘণ্টার চেষ্টায় কোনো রকমের মস্তিষ্ক, রক্তনালি কিংবা চোখের ইঞ্জুরি ছাড়াই সফলতার সঙ্গে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। গতকাল মঙ্গলবার রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।

 

জানতে চাইলে অস্ত্রোপচার দলের সদস্য ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, একটি ফলা চোখের ঠিক নিচ দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরে প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার ঢুকে গিয়েছিল। এর প্রান্তটা ছিল একেবারে মস্তিষ্কের কেন্দ্রের কাছে। তিনি বলেন, টেঁটা মূলত মাছ ধরার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এজন্য এর ফলার মাথায় বড়শির মতো একটি অংশ থাকে, মাছকে বিদ্ধ করার পর টান দিলে যেন খুলে চলে না আসে। ফলার এই প্রান্তটি রোগীর মস্তিষ্কে প্রবেশের পর একটি হাড়ের সাথে আটকে গিয়েছিল। এর কারণে এটি একটু জটিল আকার ধারণ করে। যদিও ফলা গোল হলে সহজেই বের করা যেত।
ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ আরও বলেন, বেলা ১২টার দিকে রোগী নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। অস্ত্রোপচার শুরু হয় ৫টা ৪৫ মিনিটে। অপারেশন থিয়েটারেই ইফতার সারেন সার্জনরা। এক ঘণ্টার কম সময়েই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রোগী এখন ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ। মস্তিষ্কের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ঢামেক চিকিৎসকদের সাফল্য, টেঁটা অপসারণে বাচঁলেন রোগী

আপডেট সময় : ১১:৪৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

মুখমণ্ডলের হাড় ভেদ করে টেঁটার ফলা ঢুকে গেছে মস্তিষ্কের পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে। অবস্থান একেবারে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে। রক্তনালিতে আঘাত হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দাঁড়াতো শূন্যের কোঠায়। এমন বিপজ্জনকভাবে বিদ্ধ এক রোগীর মুখমণ্ডল থেকে সফলভাবে টেঁটা অপসারণ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

আজ বুধবার (১৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার সফল অস্ত্রোপচারের তথ্য জানায়। আক্রান্ত রোগী মো. আশরাফুল (২৬) নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। সংঘর্ষে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

গত ১২ মার্চ ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিট প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাতের নেতৃত্বে অত্যন্ত জটিল এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলা অস্ত্রোপচারে আরও ছিলেন একই বিভাগের ডা. কাজী ইরফান সোবহান, ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ, ডা. শুভ্র সাহা, ডা. হাসান, ডা. পুনম রায় এবং অ্যানেস্থিশিওলজিস্ট ডা. আল বিরুনী।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। তার ডান চোখের নিচ দিয়ে টেঁটার একটি ফলা প্রবেশ করে মুখমণ্ডলের হাড় এবং বায়ু কুঠুরি ভেদ করে মস্তিষ্কের মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে অবস্থান করছিল। সিটি স্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে এর অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, এই রক্তনালির ইনজুরিতে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এমন জটিল একটা পরিস্থিতিতে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ, অ্যানেস্থিশিয়া বিভাগ এবং চক্ষু বিভাগ রোগীটির অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এক ঘণ্টার চেষ্টায় কোনো রকমের মস্তিষ্ক, রক্তনালি কিংবা চোখের ইঞ্জুরি ছাড়াই সফলতার সঙ্গে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। গতকাল মঙ্গলবার রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।

 

জানতে চাইলে অস্ত্রোপচার দলের সদস্য ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, একটি ফলা চোখের ঠিক নিচ দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরে প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার ঢুকে গিয়েছিল। এর প্রান্তটা ছিল একেবারে মস্তিষ্কের কেন্দ্রের কাছে। তিনি বলেন, টেঁটা মূলত মাছ ধরার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এজন্য এর ফলার মাথায় বড়শির মতো একটি অংশ থাকে, মাছকে বিদ্ধ করার পর টান দিলে যেন খুলে চলে না আসে। ফলার এই প্রান্তটি রোগীর মস্তিষ্কে প্রবেশের পর একটি হাড়ের সাথে আটকে গিয়েছিল। এর কারণে এটি একটু জটিল আকার ধারণ করে। যদিও ফলা গোল হলে সহজেই বের করা যেত।
ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ আরও বলেন, বেলা ১২টার দিকে রোগী নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। অস্ত্রোপচার শুরু হয় ৫টা ৪৫ মিনিটে। অপারেশন থিয়েটারেই ইফতার সারেন সার্জনরা। এক ঘণ্টার কম সময়েই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রোগী এখন ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ। মস্তিষ্কের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।