ঢাকা ১১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমি কেনাবেচায় ভোগান্তি,কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

মাহমুদ শরীফ, কুষ্টিয়া
  • আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ১৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুষ্টিয়ার কুমারখারীতে ৫/৬ বছর ধরে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় জমি বিক্রেতা ও গ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। জমি বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দলিল লেখকরা।

 

অন্যদিকে সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিল্যান্ড না থাকায় জমির নাম খারিজসহ সংশ্লিষ্ট কাজের গতি নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসিল্যান্ড ও পৌরসভার দায়িত্ব পালন করছেন।

 

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে অফিস চলছে। সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন অফিস করেন খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার। কুষ্টিয়া জেলায় বর্তমানে মাত্র ২জন সাব-রেজিস্ট্রার বিভিন্ন উপজেলায় যেয়ে সপ্তাহে এক বা দু’দিন অফিস করে থাকেন। কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গড়ে শতাধিক দলিল জমা হয়।

 

অনেক সময় বেশি দলিল হয়ে গেলে সাব-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করে যেতে পারেননা। ফলে প্রতিদিনই ক্রেতা-বিক্রেতারা দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য এলেও কোন কাজ না করেই ফিরে যাচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে  জেলা রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়েছে, তবুও কোন প্রতিকার নেই। বর্তমানে কুমারখালী উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক সপ্তাহে বুধবার একদিন অফিস চালাচ্ছেন।

 

কুমারখালী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক দ্বীন মহম্মদ মন্টু বলেন, স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন উপজেলায় ৫০জন দলিল লেখকও সংশ্লিষ্ট তিন শতাধিক পরিবার। তারা অফিসের সামনে ঘর ভাড়া নিয়ে দলিল সম্পাদন করে থাকেন। সাব-রেজিস্ট্রার প্রতিদিন অফিসে না আসায় দলিল লেখকদের আয় হচ্ছেনা। তারা খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

 

কয়েক বছর ধরে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গতকাল কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিস বন্ধ। অফিসের ভেতর নকলনবিশ বসে কাজ করছেন। কিন্তু দলিল লেখকদের অফিস ঘর সব বন্ধ। পদ্মার ওপাড় চর সাদীপুর ও জঙ্গলী গ্রাম থেকে  থেকে দলিল করতে এসেছে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ। ৩০/৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসে দলিল করতে না  পেরে ফেরত যাচ্ছেন তারা। এভাবে প্রতিদিনই দলিল করতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষগুলো।

 

দলিল  লেখকরা জানান, একটি দলিল করতে অনেক নথিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। ব্যাংক ড্রাফট, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও নামজারির খাজনা রশিদ। এ ছাড়া এসএআরএস পাকা পর্চা লাগে।

 

দেখা গেছে, কোনো দলিল গ্রহীতা কিংবা দাতা একটি কাগজ ভুলক্রমে আনতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে সেদিন আর দলিল করা যায় না। একজন দলিলের দাতা বা গ্রহীতার সঙ্গে ৫/২০ জন আসে। এতে অনেক খরচ বহন করতে হয় তাদের। প্রতিদিন অফিস হলে দাতা-গ্রহীতাদের এ ক্ষতি হতো না। কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একজন স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি করেন দলিল লেখকরা।

 

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া  জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, সারাদেশেই বিভিন্ন জায়গায় সাব- রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য রয়েছে। যে কারণে এ সমস্যা হয়েছে। সারা জেলায় ২জন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে ৬টি উপজেলায় কাজ করানো হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

 

এদিকে সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিল্যান্ড না থাকায় জমির নাম খারিজসহ সংশ্লিষ্ট কাজের গতি নেই। অনলাইন সার্ভার ও আইডি বন্ধ থাকায় দূর্ভেগের অন্ত নেই সংশ্লিষ্ট জনগনের।

 

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসিল্যান্ড ও পৌরসভা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রচুর কাজের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সবমিলে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে চরম হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে কুমারখালী ভূমি অফিসে। দ্রুত সাব-রেজিস্ট্রার ও এসিল্যান্ড নিয়োগ করা দাবী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

জমি কেনাবেচায় ভোগান্তি,কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

কুষ্টিয়ার কুমারখারীতে ৫/৬ বছর ধরে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় জমি বিক্রেতা ও গ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। জমি বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দলিল লেখকরা।

 

অন্যদিকে সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিল্যান্ড না থাকায় জমির নাম খারিজসহ সংশ্লিষ্ট কাজের গতি নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসিল্যান্ড ও পৌরসভার দায়িত্ব পালন করছেন।

 

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে অফিস চলছে। সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন অফিস করেন খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার। কুষ্টিয়া জেলায় বর্তমানে মাত্র ২জন সাব-রেজিস্ট্রার বিভিন্ন উপজেলায় যেয়ে সপ্তাহে এক বা দু’দিন অফিস করে থাকেন। কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গড়ে শতাধিক দলিল জমা হয়।

 

অনেক সময় বেশি দলিল হয়ে গেলে সাব-রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করে যেতে পারেননা। ফলে প্রতিদিনই ক্রেতা-বিক্রেতারা দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য এলেও কোন কাজ না করেই ফিরে যাচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে  জেলা রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়েছে, তবুও কোন প্রতিকার নেই। বর্তমানে কুমারখালী উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক সপ্তাহে বুধবার একদিন অফিস চালাচ্ছেন।

 

কুমারখালী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক দ্বীন মহম্মদ মন্টু বলেন, স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন উপজেলায় ৫০জন দলিল লেখকও সংশ্লিষ্ট তিন শতাধিক পরিবার। তারা অফিসের সামনে ঘর ভাড়া নিয়ে দলিল সম্পাদন করে থাকেন। সাব-রেজিস্ট্রার প্রতিদিন অফিসে না আসায় দলিল লেখকদের আয় হচ্ছেনা। তারা খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

 

কয়েক বছর ধরে স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। গতকাল কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিস বন্ধ। অফিসের ভেতর নকলনবিশ বসে কাজ করছেন। কিন্তু দলিল লেখকদের অফিস ঘর সব বন্ধ। পদ্মার ওপাড় চর সাদীপুর ও জঙ্গলী গ্রাম থেকে  থেকে দলিল করতে এসেছে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ। ৩০/৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসে দলিল করতে না  পেরে ফেরত যাচ্ছেন তারা। এভাবে প্রতিদিনই দলিল করতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষগুলো।

 

দলিল  লেখকরা জানান, একটি দলিল করতে অনেক নথিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। ব্যাংক ড্রাফট, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও নামজারির খাজনা রশিদ। এ ছাড়া এসএআরএস পাকা পর্চা লাগে।

 

দেখা গেছে, কোনো দলিল গ্রহীতা কিংবা দাতা একটি কাগজ ভুলক্রমে আনতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে সেদিন আর দলিল করা যায় না। একজন দলিলের দাতা বা গ্রহীতার সঙ্গে ৫/২০ জন আসে। এতে অনেক খরচ বহন করতে হয় তাদের। প্রতিদিন অফিস হলে দাতা-গ্রহীতাদের এ ক্ষতি হতো না। কুমারখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একজন স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি করেন দলিল লেখকরা।

 

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া  জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, সারাদেশেই বিভিন্ন জায়গায় সাব- রেজিস্ট্রারের পদ শূন্য রয়েছে। যে কারণে এ সমস্যা হয়েছে। সারা জেলায় ২জন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে ৬টি উপজেলায় কাজ করানো হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

 

এদিকে সহকারী কমিশনার ভূমি বা এসিল্যান্ড না থাকায় জমির নাম খারিজসহ সংশ্লিষ্ট কাজের গতি নেই। অনলাইন সার্ভার ও আইডি বন্ধ থাকায় দূর্ভেগের অন্ত নেই সংশ্লিষ্ট জনগনের।

 

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসিল্যান্ড ও পৌরসভা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রচুর কাজের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সবমিলে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে চরম হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে কুমারখালী ভূমি অফিসে। দ্রুত সাব-রেজিস্ট্রার ও এসিল্যান্ড নিয়োগ করা দাবী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।