ঢাকা ০৮:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ জরুরি’

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:২৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন,স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড্ড অন্তরায় সৃষ্টি করছে। সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। এই যখন অবস্থা, তখন সাংবাদিকদের একটি অংশ সেলফ সেন্সরশিপে চলে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকতা কি অপরাধ? জনস্বার্থে তথ্য অনুসন্ধান এবং তা প্রকাশ করতে গিয়ে কেন সাংবাদিকেরা ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন?

শনিবার (৭ মার্চ) বিকালে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

 

সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, বিএফইউজে নির্বাহী পরিষদ সদস্য মির্জা সেলিম রেজা,বগুড়া প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক ওয়াসিকুর রহমান বেচাল, সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, আবদুল ওয়াদুদ, মমিনুর রশিদ শাইন, আবদুর রহিম, সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, মতিউল ইসলাম সাদি, মাহফুজ মন্ডল মোস্তফা মোগল।

 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সত্য তুলে ধরা যায় না। আর সত্য লিখা না গেলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে।

 

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ,তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেল। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা। আজকের তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ভুয়া খবর বা প্রোপাগান্ডা খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।

 

ফলে অনেকেই প্রকৃত সাংবাদিকতা এবং ভুয়া সংবাদ বিভ্রান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা আর চেক অ্যান্ড ব্যালান্স ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরও সচেতন হতে হবে।

 

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তির কারণে ভয়ভীতি মাথায় রেখে সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভাজনের কারণে সাংবাদিকরা এই ভয়-ভীতি থেকে নিজেদের বের করতে পারেন না। আগে ইউনিয়ন যখন একটা ছিল। চাকরি গেলে বা কোনও চাপের মুখে পড়লে বা প্রতিষ্ঠান পাওনাদি না দিলে, মালিকদের সঙ্গে দেন দরবারের জন্য, বা অধিকার নিশ্চিত করতে গেলে তার পাশে নেতারা আছেন, এই ভরসাটুকু পেলে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যেতো। এখন অনৈক্যের কারণে ইউনিয়ন সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই সংকট উত্তরণের জন্য ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই।

 

সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, ‘আমরা-ওরা’, এসব বিভাজন আগের সাংবাদিকতায় ছিলো না। ইদানিং এটা বড্ড বেড়ে গেছে। এক বলয়ের সাংবাদিকরা অন্য বলয়ের সাথে এক টেবিলে বসেও না। ইদানীং সাংবাদিকদের প্রথমেই একটি জার্সি গায়ে দিতে হয়। অর্থাৎ তুমি সরকারি দলের কিংবা বিরোধী দলের এ রকম কিছু একটা হতে হবে। খুব কম সাংবাদিকই আজকের সাহস করে বলতে পারছেন- ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষক নই, আমার গায়ে কোনো জার্সি নেই, আমি কেবল।দেশের সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি’। আগেও সাংবাদিকরা রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করতেন, কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে থাকতেন পুরো নিরপেক্ষ। এখন সাংবাদিকদের কেউ কেউ দলদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ।

 

তিনি বলেন, নিজেদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা মর্যাদা হারাচ্ছেন। যখন কোনো একজন ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, তিনি তখন সে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। কিন্তু যখন কোনো সাংবাদিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে মিডিয়ার প্রতিনিধি। আমরা যেন সাংবাদিক থাকি, কর্মচারী হয়ে না যাই। আগে সাংবাদিকরা কাউকে স্যার বলতো না, তোষামোদী করতো না। এখন এই তোষামোদী বেড়ে গেছে। মালিক পক্ষ ও সম্পাদকদের স্যার বলতে বলতে এখন ফেনা তুলে ফেলেন সাংবাদিকরা। অর্থাৎ আমরা মিডিয়া প্রতিনিধি না থেকে কর্মচারী হয়ে যাচ্ছি। সাংবাদিকের কাজ সত্যকে খুঁজে বের করা এবং সে সত্যকে রক্ষা করা। সত্য না থাকলে আস্থা থাকে না; আর আস্থার অভাব হলে গণতন্ত্র থাকে না। ক্ষমতাশালীদের অপকর্মগুলো সাংবাদিকরা তুলে না ধরলে এসব অপকর্মের লাগাম পরানোর কাজটি করবেন কি করে। তাহলে তো অপকর্ম বাড়তেই থাকবে। সমাজ ভেঙ্গে পড়বে।

 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাংবাদিকরা দমে যেতে পারেন না। সাংবাদিকদের মোটা বেতন নেই; ঈদ-পূজোয় বোনাসের নিশ্চয়তা নেই,অবসরের পর নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের মতো পেনশন নেই; ক্যালেন্ডারে লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া ছুটি তো নেই-ই।ক’টা দিন ছুটি নিয়ে পরিবারকে নিয়ে একটু ঘুরের বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। উৎসবের দিনেও সংবাদ সংগ্রহে কিংবা প্রচার-প্রকাশে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার পরও নিরলসভাবে কাজ করে যান সাংবাদিকরা।

 

তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে যেখানেই রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন কিংবা অত্যাচার হয়েছে, সেখানেই চিন্তাশীল মানুষদের প্রতিরোধ এসেছে। সাংবাদিকরা এ চিন্তাশীলদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সমাজের বুকে। তাই তাদের কাজে থাকে সুন্দর আর সত্য সৃষ্টির গভীর উন্মাদনা। পাশাপাশি প্রতিদিন নতুন কিছু জানার, জানাবার, নতুন কিছু শেখার এবং অন্য কিছু করার ভীষণ রকম তাগিদও আছে সাংবাদিকতায়। সে তাগিদেই সব ঝুঁকি, সব কষ্ট এড়িয়ে দুঃসাহস দেখাতে পারেন সাংবাদিকরা। সত্য অনুসন্ধানে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তাদের অদম্য মানসিকতার সব চাহিদা। এজন্য সাংবাদিকদের বলা হয়, সমাজের ওয়াচডগ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

‘সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ জরুরি’

আপডেট সময় : ০২:২৯:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন,স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড্ড অন্তরায় সৃষ্টি করছে। সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। এই যখন অবস্থা, তখন সাংবাদিকদের একটি অংশ সেলফ সেন্সরশিপে চলে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকতা কি অপরাধ? জনস্বার্থে তথ্য অনুসন্ধান এবং তা প্রকাশ করতে গিয়ে কেন সাংবাদিকেরা ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন?

শনিবার (৭ মার্চ) বিকালে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

 

সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, বিএফইউজে নির্বাহী পরিষদ সদস্য মির্জা সেলিম রেজা,বগুড়া প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক ওয়াসিকুর রহমান বেচাল, সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, আবদুল ওয়াদুদ, মমিনুর রশিদ শাইন, আবদুর রহিম, সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, মতিউল ইসলাম সাদি, মাহফুজ মন্ডল মোস্তফা মোগল।

 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে সত্য তুলে ধরা যায় না। আর সত্য লিখা না গেলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে পাঠক বা দর্শক প্রত্যাখ্যান করে।

 

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ,তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেল। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা। আজকের তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ভুয়া খবর বা প্রোপাগান্ডা খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।

 

ফলে অনেকেই প্রকৃত সাংবাদিকতা এবং ভুয়া সংবাদ বিভ্রান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা আর চেক অ্যান্ড ব্যালান্স ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরও সচেতন হতে হবে।

 

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তির কারণে ভয়ভীতি মাথায় রেখে সাংবাদিকদের কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভাজনের কারণে সাংবাদিকরা এই ভয়-ভীতি থেকে নিজেদের বের করতে পারেন না। আগে ইউনিয়ন যখন একটা ছিল। চাকরি গেলে বা কোনও চাপের মুখে পড়লে বা প্রতিষ্ঠান পাওনাদি না দিলে, মালিকদের সঙ্গে দেন দরবারের জন্য, বা অধিকার নিশ্চিত করতে গেলে তার পাশে নেতারা আছেন, এই ভরসাটুকু পেলে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যেতো। এখন অনৈক্যের কারণে ইউনিয়ন সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই সংকট উত্তরণের জন্য ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই।

 

সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, ‘আমরা-ওরা’, এসব বিভাজন আগের সাংবাদিকতায় ছিলো না। ইদানিং এটা বড্ড বেড়ে গেছে। এক বলয়ের সাংবাদিকরা অন্য বলয়ের সাথে এক টেবিলে বসেও না। ইদানীং সাংবাদিকদের প্রথমেই একটি জার্সি গায়ে দিতে হয়। অর্থাৎ তুমি সরকারি দলের কিংবা বিরোধী দলের এ রকম কিছু একটা হতে হবে। খুব কম সাংবাদিকই আজকের সাহস করে বলতে পারছেন- ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষক নই, আমার গায়ে কোনো জার্সি নেই, আমি কেবল।দেশের সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি’। আগেও সাংবাদিকরা রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করতেন, কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে থাকতেন পুরো নিরপেক্ষ। এখন সাংবাদিকদের কেউ কেউ দলদাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ।

 

তিনি বলেন, নিজেদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা মর্যাদা হারাচ্ছেন। যখন কোনো একজন ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, তিনি তখন সে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। কিন্তু যখন কোনো সাংবাদিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নন। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে মিডিয়ার প্রতিনিধি। আমরা যেন সাংবাদিক থাকি, কর্মচারী হয়ে না যাই। আগে সাংবাদিকরা কাউকে স্যার বলতো না, তোষামোদী করতো না। এখন এই তোষামোদী বেড়ে গেছে। মালিক পক্ষ ও সম্পাদকদের স্যার বলতে বলতে এখন ফেনা তুলে ফেলেন সাংবাদিকরা। অর্থাৎ আমরা মিডিয়া প্রতিনিধি না থেকে কর্মচারী হয়ে যাচ্ছি। সাংবাদিকের কাজ সত্যকে খুঁজে বের করা এবং সে সত্যকে রক্ষা করা। সত্য না থাকলে আস্থা থাকে না; আর আস্থার অভাব হলে গণতন্ত্র থাকে না। ক্ষমতাশালীদের অপকর্মগুলো সাংবাদিকরা তুলে না ধরলে এসব অপকর্মের লাগাম পরানোর কাজটি করবেন কি করে। তাহলে তো অপকর্ম বাড়তেই থাকবে। সমাজ ভেঙ্গে পড়বে।

 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাংবাদিকরা দমে যেতে পারেন না। সাংবাদিকদের মোটা বেতন নেই; ঈদ-পূজোয় বোনাসের নিশ্চয়তা নেই,অবসরের পর নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের মতো পেনশন নেই; ক্যালেন্ডারে লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে দেওয়া ছুটি তো নেই-ই।ক’টা দিন ছুটি নিয়ে পরিবারকে নিয়ে একটু ঘুরের বেড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। উৎসবের দিনেও সংবাদ সংগ্রহে কিংবা প্রচার-প্রকাশে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার পরও নিরলসভাবে কাজ করে যান সাংবাদিকরা।

 

তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে যেখানেই রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন কিংবা অত্যাচার হয়েছে, সেখানেই চিন্তাশীল মানুষদের প্রতিরোধ এসেছে। সাংবাদিকরা এ চিন্তাশীলদের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সমাজের বুকে। তাই তাদের কাজে থাকে সুন্দর আর সত্য সৃষ্টির গভীর উন্মাদনা। পাশাপাশি প্রতিদিন নতুন কিছু জানার, জানাবার, নতুন কিছু শেখার এবং অন্য কিছু করার ভীষণ রকম তাগিদও আছে সাংবাদিকতায়। সে তাগিদেই সব ঝুঁকি, সব কষ্ট এড়িয়ে দুঃসাহস দেখাতে পারেন সাংবাদিকরা। সত্য অনুসন্ধানে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তাদের অদম্য মানসিকতার সব চাহিদা। এজন্য সাংবাদিকদের বলা হয়, সমাজের ওয়াচডগ।