ঢাকা ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী ক্যাডার পেলেন সরকারি সহায়তার চেক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫ ৪ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহিত ছবি

দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসী তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ুকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সরকার। অথচ একই এলাকার নুরুল মোস্তফা আন্দোলনে শহীদ হলেও তার পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয়নি। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে হতাহতদের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের হাত থেকে দুই আওয়ামী ক্যাডারের চেক নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। আন্দোলনে হামলাকারী এই আওয়ামী সন্ত্রাসী কীভাবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিকায় স্থান পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।

 

গত ৪ আগস্ট ঈদগাঁও বাস স্টেশনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা, থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমার উপস্থিতিতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও আওয়ামী ক্যাডার তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু গণপিটুনির শিকার হয়। ঘটনার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা নেওয়া এ সন্ত্রাসীকে জুলাই বিপ্লবে আহত হিসেবে পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা।

 

এ ছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাসী ও সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঈদগাঁওয়ের শিবির নেতা শহীদ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার বাবার নাম মাস্টার মোজাম্মেল হক ফরাজী। তিনি ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজী পাড়ার বাসিন্দা। তিনি বৃহত্তর ঈদগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি, অবিভক্ত কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আমরণ উপদেষ্টা ছিলেন।

 

এ ছাড়া লেড়ুর ভাই জাহেদুল হক ফরাজীও আওয়ামী লীগ নেতা। সহায়তার চেক গ্রহণের সময় তিনিও সঙ্গে ছিলেন।

 

ঈদগাঁও উপজেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট এসকে আহমদ ফারুকী তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী কিছু ছাত্রলীগ পতিত আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ছদ্মবেশী ছাত্র প্রতিনিধি সেজে এ তালিকা প্রণয়নের কাজে চিহ্নিত আওয়ামী ক্যাডারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকতে পারে। তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু ও জাহেদুল হক ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা ছিল। তা না করে উল্টো তাদের পুরস্কৃত করছে সরকার। অবিলম্বে ঘটনাটি তদন্ত করে এ কাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, সরকারি সহায়তার জন্য হতাহতের তালিকা উপজেলা প্রশাসন পাঠায়নি। এটা ছাত্র প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন। এ কারণে ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা বলতে পারবো না।

 

অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ঈদগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ নুরুল মুস্তফার পরিবারকে কিছুই দেয়নি জুলাই শহীধ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে তার বাবা শফিউল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, লেখাপড়া জানি না। কাগজপত্রের বিষয়ে বেশি বুঝি না। কিছু নথির জটিলতার কারণে আমরা আবেদনও করতে পারিনি। তাই আমাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। সূত্র: বিডি টুডে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আওয়ামী ক্যাডার পেলেন সরকারি সহায়তার চেক

আপডেট সময় : ০৯:৪২:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসী তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ুকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সরকার। অথচ একই এলাকার নুরুল মোস্তফা আন্দোলনে শহীদ হলেও তার পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয়নি। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে হতাহতদের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের হাত থেকে দুই আওয়ামী ক্যাডারের চেক নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। আন্দোলনে হামলাকারী এই আওয়ামী সন্ত্রাসী কীভাবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিকায় স্থান পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।

 

গত ৪ আগস্ট ঈদগাঁও বাস স্টেশনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা, থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমার উপস্থিতিতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও আওয়ামী ক্যাডার তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু গণপিটুনির শিকার হয়। ঘটনার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা নেওয়া এ সন্ত্রাসীকে জুলাই বিপ্লবে আহত হিসেবে পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা।

 

এ ছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাসী ও সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঈদগাঁওয়ের শিবির নেতা শহীদ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তার বাবার নাম মাস্টার মোজাম্মেল হক ফরাজী। তিনি ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ফরাজী পাড়ার বাসিন্দা। তিনি বৃহত্তর ঈদগাঁও আওয়ামী লীগের সভাপতি, অবিভক্ত কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আমরণ উপদেষ্টা ছিলেন।

 

এ ছাড়া লেড়ুর ভাই জাহেদুল হক ফরাজীও আওয়ামী লীগ নেতা। সহায়তার চেক গ্রহণের সময় তিনিও সঙ্গে ছিলেন।

 

ঈদগাঁও উপজেলা জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অ্যাডভোকেট এসকে আহমদ ফারুকী তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী কিছু ছাত্রলীগ পতিত আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ছদ্মবেশী ছাত্র প্রতিনিধি সেজে এ তালিকা প্রণয়নের কাজে চিহ্নিত আওয়ামী ক্যাডারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকতে পারে। তাছনিমুল হক ফরাজি লেড়ু ও জাহেদুল হক ফরাজীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা ছিল। তা না করে উল্টো তাদের পুরস্কৃত করছে সরকার। অবিলম্বে ঘটনাটি তদন্ত করে এ কাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, সরকারি সহায়তার জন্য হতাহতের তালিকা উপজেলা প্রশাসন পাঠায়নি। এটা ছাত্র প্রতিনিধিরা পাঠিয়েছেন। এ কারণে ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা বলতে পারবো না।

 

অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ঈদগাঁওয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শহীদ নুরুল মুস্তফার পরিবারকে কিছুই দেয়নি জুলাই শহীধ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে তার বাবা শফিউল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, লেখাপড়া জানি না। কাগজপত্রের বিষয়ে বেশি বুঝি না। কিছু নথির জটিলতার কারণে আমরা আবেদনও করতে পারিনি। তাই আমাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। সূত্র: বিডি টুডে