ঢাকা ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোস্তফা অপরাধী নাকি ভিকটিম?

শিবলী মাহাদী, লেখক ও কলামিষ্ট
  • আপডেট সময় : ০২:২৪:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫ ৬৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক মিরর টাইমস অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হতে পারে সে একজন ধার্মিক আল্লাহভীরু পুরুষ! হতে পারে সে একজন নারী উত্তাক্তকারী! আল্লাহ জানে….. হতে পারে সে একজন ভিকটিম আবার হতে পারে সে একজন অপরাধী।

জনাব মোস্তাফার ভাষ্যমতে, জনৈক নারী রাস্তা দিয়ে বেপর্দায় চলাচল করছিলো তিনি নারী কে বিনয়ের সাথে বলেছেন, ” রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে নারী কে পর্দার সহিত চলাচল করতে বলেছেন”

আর কথিত ভিকটিম এর ভাষ্যমতে “আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল।আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিক মত ওড়না পরে ছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে”

দুইজনের ভাষ্যমতে একটি বিষয় মিলে গিয়েছে যে তাদের মধ্যে পোশাক ও পর্দা করা নিয়ে কথোপকথন হয়েছে। হয়তো জনাব মোস্তাফা আক্রমনাত্মক ছিলেন অথবা বিনয়ী ছিলেন।

 

চলুন আমরা একটু পোশাকের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন নিয়ে একটু কথা বলি

” আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৩৬ (চলাচলের স্বাধীনতা) পোশাকের বিষয়ে কোনো বাধানিষেধ নাই। তবে কেউ যদি আবার পোশাকই না পরেন সে ব্যাপারে আইনে বাধা আছে। এটাকে আইন পাবলিক ন্যুইসেন্স হিসেবে দেখে এবং সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে” অভিযোগকারী নারীর শরীরে পোশাক ছিলো এবং সেটি খুব বেশি দৃষ্টিকটুর ছিলোনা (উপস্থিত জনতার ভাষ্যমতে)

অন্যদিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে কিন্তু এটা কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কেউ ধর্মীয় পোশাক পরতে পারেন আবার কেউ নাও পরতে পারেন। এটা যার যার স্বাধীনতা” (সংবিধান এর ৪১ অনুচ্ছেদ )

সুতরাং এটুকু পরিষ্কার দেশের প্রচলিত আইনে জনাব মোস্তাফা একজন নারী উত্তাক্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত (বিচারাধীন)
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ। কিন্তু নারীদের জোড় করে পর্দা করানো যাবে কিনা সে বিষয়ে ইসলাম কি বলে চলেন দেখে আসি,

ইসলামে বিশ্বাস ও ইবাদত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৬— “ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।” ) কেউ পর্দা করতে না চাইলে তাকে শিক্ষা ও উপদেশ দেওয়া যেতে পারে, তবে জোর করা বা বাধ্য করা ইসলামের মূল নীতির বিরুদ্ধে।

জনাব মোস্তাফা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও অভিযোগকারী নারীকে পর্দা করতে বাধ্য করতে পারেন না। এছাড়াও পুরুষের চোখের পর্দা বিষয়ে ইসলামে বিধান আছে। জনাব মোস্তাফা বেপর্দা নারীর দিকে তাকিয়ে (তর্ক করতে গিয়ে একাধিকবার তাকিয়েও ইসলামের হুকুমাত লঙ্ঘন করেছেন)

“কিন্তু আমি মোস্তফার বিরুদ্ধে আনিত ইভটিজিং এর অভিযোগ এর বিষয়ে একটু আলোচনা করতে চাই! যেহেতু আমাদের দেশের ৯৫ শতাংশ মুসলমান এবং ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সেই দিক বিবেচনায় অনেকে আবেগের বশীভুত হয়ে এই ধরনের কাজ করে থাকতে পারে সেক্ষেত্রে তার Intention কি ছিলো সেটি নির্ধারণ করতে জনাব মোস্তাফার পূর্ববর্তী রেকর্ড এবং তার পরিবার ইসলামের প্রতি কতোটা সংবেদনশীল সেটি বিবেচনায় আনা যেতে পারে”

এবার আসুন তাওহীদী জনতার কর্মকান্ড নিয়ে। প্রথমেই আমি ঘোর আপত্তি জানাচ্ছি তাওহীদ শব্দটি ব্যবহারে। কারণ মানুষ এই শব্দটির অপব্যবহার করছে। জনাব মোস্তাফা এখনো অপরাধী নাকি ভুক্তভোগী সেটি প্রমাণিত হয়নি। তিনি কেবল জামিন পেয়েছেন। এটা একটা বিচারাধীন প্রক্রিয়া। তিনি এখনো বিচারাধীন মামলা থেকে খালাস পান নাই।

 

তাহলে তাকে জেলগেটে এভাবে দলবলে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা এবং পবিত্র কোরআন হাতে দেওয়ার ধৃষ্টতা তারা কোথায় পেলো? তারা জাতির কাছে কি ম্যাসেজ দিতে চায়? যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার হয় তাহলে তারা সকল ইভটিজার কে অনুপ্রাণিত করলো। এখন তো ইভটিজাররা ইভটিজিং করে সেখানে তাওহীদী জনতার রেফারেন্স দিবে। তাওহীদ কে যারা ঢাল ,তলোয়ার বানিয়ে ব্যবহার করছে তাদের কে আইনের আওতায় আনতে হবে।

যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার প্রমাণিত হয় তাহলে (সূরা মায়িদাহ (৫:৩৩) অনুযায়ী, ) যারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের শূলবিদ্ধ করা বা দেশ থেকে নির্বাসিত করার মতো কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে” আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তাওহীদী জনতার ব্যানারে থাকা লোকগুলোকে শূলে চড়ানো অথবা নির্বাসিত করার দাবি জানাচ্ছি…… আর যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার না হয়ে থাকে তবে তাকে আবেগ, সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করে ইসলামের দাওয়ার দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি!

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

মোস্তফা অপরাধী নাকি ভিকটিম?

আপডেট সময় : ০২:২৪:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

হতে পারে সে একজন ধার্মিক আল্লাহভীরু পুরুষ! হতে পারে সে একজন নারী উত্তাক্তকারী! আল্লাহ জানে….. হতে পারে সে একজন ভিকটিম আবার হতে পারে সে একজন অপরাধী।

জনাব মোস্তাফার ভাষ্যমতে, জনৈক নারী রাস্তা দিয়ে বেপর্দায় চলাচল করছিলো তিনি নারী কে বিনয়ের সাথে বলেছেন, ” রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে নারী কে পর্দার সহিত চলাচল করতে বলেছেন”

আর কথিত ভিকটিম এর ভাষ্যমতে “আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল।আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিক মত ওড়না পরে ছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে”

দুইজনের ভাষ্যমতে একটি বিষয় মিলে গিয়েছে যে তাদের মধ্যে পোশাক ও পর্দা করা নিয়ে কথোপকথন হয়েছে। হয়তো জনাব মোস্তাফা আক্রমনাত্মক ছিলেন অথবা বিনয়ী ছিলেন।

 

চলুন আমরা একটু পোশাকের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন নিয়ে একটু কথা বলি

” আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৩৬ (চলাচলের স্বাধীনতা) পোশাকের বিষয়ে কোনো বাধানিষেধ নাই। তবে কেউ যদি আবার পোশাকই না পরেন সে ব্যাপারে আইনে বাধা আছে। এটাকে আইন পাবলিক ন্যুইসেন্স হিসেবে দেখে এবং সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে” অভিযোগকারী নারীর শরীরে পোশাক ছিলো এবং সেটি খুব বেশি দৃষ্টিকটুর ছিলোনা (উপস্থিত জনতার ভাষ্যমতে)

অন্যদিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে কিন্তু এটা কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কেউ ধর্মীয় পোশাক পরতে পারেন আবার কেউ নাও পরতে পারেন। এটা যার যার স্বাধীনতা” (সংবিধান এর ৪১ অনুচ্ছেদ )

সুতরাং এটুকু পরিষ্কার দেশের প্রচলিত আইনে জনাব মোস্তাফা একজন নারী উত্তাক্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত (বিচারাধীন)
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের উপর পর্দা করা ফরজ। কিন্তু নারীদের জোড় করে পর্দা করানো যাবে কিনা সে বিষয়ে ইসলাম কি বলে চলেন দেখে আসি,

ইসলামে বিশ্বাস ও ইবাদত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৬— “ধর্মের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।” ) কেউ পর্দা করতে না চাইলে তাকে শিক্ষা ও উপদেশ দেওয়া যেতে পারে, তবে জোর করা বা বাধ্য করা ইসলামের মূল নীতির বিরুদ্ধে।

জনাব মোস্তাফা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও অভিযোগকারী নারীকে পর্দা করতে বাধ্য করতে পারেন না। এছাড়াও পুরুষের চোখের পর্দা বিষয়ে ইসলামে বিধান আছে। জনাব মোস্তাফা বেপর্দা নারীর দিকে তাকিয়ে (তর্ক করতে গিয়ে একাধিকবার তাকিয়েও ইসলামের হুকুমাত লঙ্ঘন করেছেন)

“কিন্তু আমি মোস্তফার বিরুদ্ধে আনিত ইভটিজিং এর অভিযোগ এর বিষয়ে একটু আলোচনা করতে চাই! যেহেতু আমাদের দেশের ৯৫ শতাংশ মুসলমান এবং ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সেই দিক বিবেচনায় অনেকে আবেগের বশীভুত হয়ে এই ধরনের কাজ করে থাকতে পারে সেক্ষেত্রে তার Intention কি ছিলো সেটি নির্ধারণ করতে জনাব মোস্তাফার পূর্ববর্তী রেকর্ড এবং তার পরিবার ইসলামের প্রতি কতোটা সংবেদনশীল সেটি বিবেচনায় আনা যেতে পারে”

এবার আসুন তাওহীদী জনতার কর্মকান্ড নিয়ে। প্রথমেই আমি ঘোর আপত্তি জানাচ্ছি তাওহীদ শব্দটি ব্যবহারে। কারণ মানুষ এই শব্দটির অপব্যবহার করছে। জনাব মোস্তাফা এখনো অপরাধী নাকি ভুক্তভোগী সেটি প্রমাণিত হয়নি। তিনি কেবল জামিন পেয়েছেন। এটা একটা বিচারাধীন প্রক্রিয়া। তিনি এখনো বিচারাধীন মামলা থেকে খালাস পান নাই।

 

তাহলে তাকে জেলগেটে এভাবে দলবলে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করা এবং পবিত্র কোরআন হাতে দেওয়ার ধৃষ্টতা তারা কোথায় পেলো? তারা জাতির কাছে কি ম্যাসেজ দিতে চায়? যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার হয় তাহলে তারা সকল ইভটিজার কে অনুপ্রাণিত করলো। এখন তো ইভটিজাররা ইভটিজিং করে সেখানে তাওহীদী জনতার রেফারেন্স দিবে। তাওহীদ কে যারা ঢাল ,তলোয়ার বানিয়ে ব্যবহার করছে তাদের কে আইনের আওতায় আনতে হবে।

যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার প্রমাণিত হয় তাহলে (সূরা মায়িদাহ (৫:৩৩) অনুযায়ী, ) যারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের শূলবিদ্ধ করা বা দেশ থেকে নির্বাসিত করার মতো কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে” আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী তাওহীদী জনতার ব্যানারে থাকা লোকগুলোকে শূলে চড়ানো অথবা নির্বাসিত করার দাবি জানাচ্ছি…… আর যদি জনাব মোস্তাফা ইভটিজার না হয়ে থাকে তবে তাকে আবেগ, সংবেদন নিয়ন্ত্রণ করে ইসলামের দাওয়ার দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি!