নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ আফ্রিকার

- আপডেট সময় : ০৫:৩৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে
উইকেটে ব্যাটারদের জন্য যথেষ্ট সাহায্য থাকায় বড় স্কোরের বিকল্প ছিল না। শুরুটা ধীরে হলেও সেট হয়ে দলকে সেদিকেই নিয়ে গেলেন রাচিন রবীন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসন। দুজনেই করলেন সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ড বোর্ডে দাঁড় করাল রেকর্ড রান। সেই রান পাড়ি দিতে যেমন আগ্রাসী ব্যাটিং দরকার, শুরু থেকেই তা করতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। টেম্বা বাভুমা ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ফিফটি করলেন বটে, তবে বিশাল রান তাড়া তাদের প্রচেষ্টা বিফলেই গেল। শেষের দিকে ডেভিড মিলার করলেন ঝড়ো সেঞ্চুরি, তবে বোলারদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ফাইনালে পা রাখল মিচেল স্যান্টনারের দলই।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫০ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দলটির করা ৬ উইকেটে ৩৬২ রানের জবাবে ৫০ ওভারে বাভুমার দল থেমেছে ৯ উইকেটে ৩১২ রানে।
আগামী ৯ মার্চ দুবাইতে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ভারত, যারা প্রথম সেমিতে ৪ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দুবাইতেই ভারতের কাছে ৪৪ রানে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড।
এবারের আসরেই ৩৫১ রান তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেদিন প্রথম ৩০ ওভারে খুব মেরেকেটে না খেলেও জয় পেয়েছিল তারা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়াটা ছিল এরচেয়েও সাবধানী। রায়ান রিকেল্টন অল্পে বিদায় নেওয়ার পর ইনিংসের সেরা জুটিটি গড়েন বাভুমা ও ডুসেন মিলে।
তবে দুজনের কেউই বোলারদের সেভাবে চাপে ফেলতে পারেননি। প্রথম ১০ রান করতে প্রায় ৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা বাভুমা পরে তা কাটিয়ে ওঠেন অনেকটাই। তবে টার্গেট যখন ৩৬৩, তখন প্রতি ওভারেই যোগ হয় বাড়তি চাপ। ডুসেন সেই কাজটা ভালো সামাল দিলেও বাভুমার ধীরগতির ব্যাটিং চাপে ফেলে তাকেও।
আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগান স্যান্টনার। তার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ৭১ বলে ৫৬ রানে বিদায় নেন বাভুমা। এর কিছুক্ষণ পর ছন্দে থাকা ডুসেনকেও শিকার বানিয়ে ম্যাচ থেকে প্রতিপক্ষকে ছিটকে দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক।
তাদের ১০৫ রানের ওই জুটির পরও ভালোভাবেই আশা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে। তবে এরপরই তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন দারুণ এক স্পেল উপহার দেওয়া স্যান্টনার। উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাত্র ৩ রানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্বপ্নের ফর্মে থাকা হেনরিখ ক্লাসেন। বলা যায় সেখানেই ম্যাচের সমাপ্তি হয়ে যায়।
এরপর একাই লড়াই চালিয়ে যান ডেভিড মিলার। তবে বল ও রানের ব্যবধানের সাথে পাল্লা দিয়ে পারেননি ‘কিলার মিলার’ খ্যাত এই ব্যাটারও। ব্যাট হাতে দলকে হতাশ করেন দুই অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডার ও মার্কো ইয়ানসেনও।
অসম্ভব সমীকরণ মেলানোর মিশনে শেষের কয়েকটি ওভারে বড় কয়েকটি শট আসে মিলারের ব্যাট থেকে, হয়ে যায় ফিফটিও। তবে শেষ পর্যন্ত তার ইনিংস দলের হারের ব্যবধানই কমাতে পারে কেবল। দর্শকদের বিনোদনের খোরাক জুগিয়ে মিলার ৫০তম ওভারে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান নিয়ে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। বল খেলেন মাত্র ৬৭টি।
১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বলের নিউজিল্যান্ড কাপ্তান স্যান্টনারই।
লাহোরের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ক্রিজে সেট হলেই ব্যাটাররা পান সহজেই রানের দেখা। সেই চিন্তা থেকেই কিনা, প্রথম দশ ওভারে অতি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের দিকে না গিয়ে স্রেফ বাজে বল পেলেই মারার দিকে ঝুঁকেন দুই ওপেনার রাচিন ও উইল ইয়ং। তিন বাউন্ডারিতে শুরুটা ভালো পেলেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন ইয়ং। দলীয় ৪৫ রানে ডানহাতি এই ব্যাটারকে এইডেন মার্করামের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান লুঙ্গি এনগিডি।
বল হাতে প্রোটিয়াসদের আনন্দের উপলক্ষ্য ছিল ওটুকুই। এরপর বোলারদের ওপর চড়াও হন রাচিন ও উইলিয়ামসন জুটি। ৪৭ বলে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন রাচিন। শুরুটা কিছুটা ধীরগতিতে হলেও ক্রমেই রানের গতি বাড়ান উইলিইয়ামনও।
তবে বেশি আগ্রাসী থাকা রাচিন আশির ঘরে পা রাখেন কেশভ মহারাজের এক ওভারে চার ও ছক্কা মেরে। ৬১ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন উইলিইয়ামন। জমে ওঠা এই জুটি রান করতে তাকে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে। তাতে হয়ে যায় জুটির শতকও।
ইনিংসের ৩২তম ওভারে সেঞ্চুরির দেখা পান রাচিন। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন ইনিংসে এটি বাঁহাতি ব্যাটারের দ্বিতীয় শতক। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম, এজন্য তিনি খেলেছেন মাত্র ২৮ ইনিংস। যা নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম। আর আইসিসি ইভেন্টে কিউইদের হয়ে এখন সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক রাচিনই।
যদিও এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। ১০৮ রানে তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান কাগিসো রাবাদা। তাতে শেষ হয় তার ও উইলিয়ামসনের ১৬৪ রানের জুটি, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখন নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি।
এর খানিক বাদে সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে যায় উইলিয়ামসনেরও। তিনিও তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখেন বাউন্ডারি মেরে। তবে একই ওভারে উইয়ান মুল্ডারকে স্কুপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। তবে তার আগে খেলেন ৯৪ বলে ১০২ ক্লাসিক ইনিংস।
তার বিদায়ের পর শেষের দিকে ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের ব্যাট থেকে আসে দুটি কার্যকর ক্যামিও। মিচেল ৪৯ করে আউট হন। আর ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে একই স্কোর ছিল ফিলিপসেরও। তাতে ভর করে সব আসর মিলিয়ে সবোর্চ্চ দলীয় স্কোর গড়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। তাদের ৩৬২ রান আইসিসি ইভেন্টে তৃতীয় সবোর্চ্চ দলীয় স্কোর। ৭২ রানে ৩ উইকেট নেন এনগিডি।