মাদ্রাসায় না এসেও প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত বেতন তোলেন মিনাল

- আপডেট সময় : ০১:১১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে
থাকেন ঢাকায়। কোনো মাসে আসেন দু-দিন, কোন মাসে তিনদিন, কোনো মাসে তার হদিসই মিলে না। আবার যেদিন আসেন সেদিন হাজিরা থাতায় অনুপস্থিত দিনগুলোর সাক্ষর করে যান। মাস শেষে বেতন তোলেন নিয়মিত।
প্রভাব খাটিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন মাদ্রাসায় না গিয়েও হাজিরা খাতায় উপস্থিতির সাক্ষর ও সরকারি কোষাগারের বেতন তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী লাইব্রেরিয়ানের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. মিনাল জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মেলান্দহ সদর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় কর্মরত। এমন ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সচিবদের সাথে পরিচয় থাকায় নিয়মিত মাদ্রাসায় না এসেও উপর মহল থেকে শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করেই ওই লাইব্রেরিয়ান দীর্ঘদিন ধরেই অনৈতিকভাবে এসব সুযোগ সুবিধা নিয়মিত তুলে নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালের জুলাইয়ে মো. মিনাল মেলান্দহ সদর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে তার ইচ্ছা মতো মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করছেন। নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত না থেকে ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
অভিযোগ পাওয়া গেছে যোগদানের পর থেকেই অদৃশ্য ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে আসেন না তিনি। কোন মাসে দুইবার আবার দু-মাসে একবার আসেন তিনি। আবার যখন আসেন তখন হাজিরা খাতায় না আসা দিন গুলোর স্বাক্ষর করে চলে যান তিনি।
এ নিয়ে কয়েকদিন মাদ্রাসায় সরেজমিনে গিয়ে সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. মিনাল কে পাওয়া যায়নি। এসময় শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র-ছাত্রী তাকে চেনে না বলে জানায়। এভাবে বছরের পর বছর মাদ্রাসা তিনি অনুপস্থিত। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি বিদ্যমান। আবার মাস গেলে বেতনও তোলেন নিয়মিত।
তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। মাস শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান সঙ্গে যোগসাজশেই তিনি বেতন তুলে নেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. মিনালের বাড়ি মেলান্দহ পৌরসভার দক্ষিণ শাহাজাতপুর এলাকায়। সে ওই এলাকার মৃত জালাল মন্ডলের ছেলে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন।
মো. আবু ফয়সাল নামে মাদ্রাসা এক শিক্ষার্থী জানায় ‘আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের মাদ্রাসায় মোহাম্মদ মিনাল নামের সহকারী লাইব্রেরিয়ান দায়িত্বে রয়েছে। এর আগে কখনো শুনিনি আর তাকে কোনদিন এক নজর দেখতেও পায়নি আমরা।
মো. হালিম নামে ওই মাদ্রাসার সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন,‘এই মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ বছর পড়ালেখা শেষে ২০২৩ সালে এই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে বের হয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছরে মো. মিনাল নামের কোনো সহকারী লাইব্রেরিয়ান যে দায়িত্ব আছে তা মাদ্রাসায় দেখিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে মোহাম্মদ মিনাল মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকলেও তার হাজিরা খাতায় সাক্ষর উঠে কিভাবে। এতো কিছুর পরেও সে নিয়মিত কিভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন?।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। তিনি তো সব জানে তার পরেও মাদ্রাসায় না এসে সে বেতন তুলেন কিভাবে।
মাদ্রাসার আশেপাশের লোকজন জানান, তার সচিবালয়ে বড় বড় লোকদের সাথে পরিচয় আছে। তাদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়েই তিনি ঢাকায় থাকেন মাদ্রাসায় আসেন না। মাসে দু-য়েক দিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। সচিবালয়ে লোকের প্রভাব খাটিয়ে বেতন উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. মিনালের বক্তব্য জানতে তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে তার বাড়ির লোকজন জানান, মিনাল বেশিরভাগ সময়ই ঢাকা থাকে। মাদ্রাসায় মাসে কয়েকদিন আসে। এলাকায় মাঝে মাঝে ঘুরতে আসেন। গত সপ্তাহেও বাড়িতে এসে ঘুরে গেছেন তিনি।
পরে মুঠোফোনে কথা হলে অভিযুক্ত মিনাল জানান, ‘আমি অসুস্থ ঢাকায় আছি, প্রিন্সিপাল স্যারও ঢাকায় আসবে। আমি আপনার সাথে ১০ মিনিট পর কথা বলি।’ এই বলে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে মেলান্দহ সদর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সে এই মাসে আসেন নাই, মেডিকেলে আছে, আর উনি যে নিয়মিত আসেন না সেটাই বলব। আমি মিথ্যা কথা বলব না। বিষয়টি এডিসি মহোদয়কে জানিয়েছি। সে মাঝে মাঝেই দুই থেকে চারদিন অনুপস্থিত থাকে। এ নিয়ে তাকে নোটিশ দেয়া আছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে নোটিশ দিচ্ছি। এর আগে কয়েকবার তার বেতন বন্ধ হয়েছে আবার সেই ঠিক করেছে। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর বিএনপির বড় বড় দুই নেতা ফোন দিয়ে বলেছে তাকে একটু দেইখেন আমি বিনয়ের সাথে বলছি আমার চাকুরীর রিক্স নিয়ে তাকে বাচাঁতে পারব না।’
এ প্রসঙ্গে মেলান্দহ সদর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় সভাপতি ও জামালপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আফসানা তাসলিম বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।